
নিরাপদ আবাসন দাবিতে আন্দোলনের জেরে ঢাকা মেডিকেল কলেজের ক্লাস বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে এবং শিক্ষার্থীদের আগামীকাল দুপুর ১২টার মধ্যে হল ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের একাডেমিক কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে কলেজ প্রশাসন। একই সঙ্গে শিক্ষার্থীদের আগামীকাল রোববার (২২ জুন, ২০২৫) দুপুর ১২টার মধ্যে ছাত্রাবাস ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই সিদ্ধান্তে পেশাগত এমবিবিএস পরীক্ষার্থী এবং বিদেশি শিক্ষার্থীরা অন্তর্ভুক্ত নয়, অর্থাৎ তারা হলে থাকতে পারবেন এবং তাদের জন্য ক্লাস কার্যক্রম চালু থাকবে। কলেজ প্রশাসনের তরফ থেকে বলা হয়েছে, একাডেমিক কাউন্সিলের জরুরি বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্তের আলোকে এই নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।
কলেজের প্রশাসনিক সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি শিক্ষার্থীদের নিরাপদ ক্যাম্পাস ও আবাসনের দাবিতে ধারাবাহিক আন্দোলন চরমে পৌঁছায়। একাডেমিক ভবনের ছাদ ও দেওয়ালের পলেস্তারা খসে পড়ার মতো বেশ কয়েকটি ঘটনা শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। ছাত্ররা দাবি করেছে, ফজলে রাব্বি হল এবং আরেকটি আবাসিক হলের অবস্থা এতটাই নাজুক যে সেখানে বসবাস করা আর সম্ভব নয়। ছাত্রী হলগুলোর অবস্থাও ভালো নয়—সিলিং খসে পড়ছে, পানি ঝরছে, অনেক কক্ষে ফাটল দেখা দিয়েছে। এসব কারণে শিক্ষার্থীরা আশঙ্কা প্রকাশ করে যে, যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে এবং প্রাণহানিও হতে পারে।
এই পরিস্থিতিতে, শনিবার সকালে শত শত শিক্ষার্থী কলেজ ক্যাম্পাসে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে। তারা ক্লাসে না ফেরার ঘোষণা দেন এবং বলেন, যতদিন না তাদের দাবি বাস্তবায়িত হবে, ততদিন তারা ক্লাসে ফিরবেন না। তারা সরকারের কাছে দাবি জানান, চলতি অর্থবছরের বাজেটে ছাত্রাবাস সংস্কার ও নবনির্মাণের জন্য পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ দিতে হবে। নিরাপদ আবাসন ছাড়া চিকিৎসা শিক্ষার পরিবেশ বজায় রাখা সম্ভব নয় বলে শিক্ষার্থীরা মত প্রকাশ করেন।
এদিকে কলেজ প্রশাসন শিক্ষার্থীদের দাবি ও অবস্থান কর্মসূচির প্রতি সহানুভূতি জানালেও, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং ভবিষ্যৎ অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করে। একাডেমিক কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেয়া এবং ছাত্রাবাস খালি করার নির্দেশ তারই প্রতিফলন। তবে, প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখনো জানানো হয়নি কবে নাগাদ সমস্যাগুলো সমাধান হবে এবং ক্লাস পুনরায় শুরু হবে।
এই সিদ্ধান্তে শিক্ষার্থীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। অনেকেই মনে করছেন, এই বন্ধ ঘোষণা তাদের পড়াশোনার ওপর দীর্ঘমেয়াদে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। বিশেষ করে যারা ইন্টার্নশিপ বা পেশাগত পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, তাদের জন্য এটি বড় ধাক্কা। অন্যদিকে, অনেক শিক্ষার্থী মনে করছেন প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্ত প্রমাণ করে যে, ক্যাম্পাসের অবকাঠামোগত সমস্যা আসলেই গুরুতর এবং সেটি এখন দ্রুত সমাধানের দাবিদার।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজের মতো একটি প্রতিষ্ঠানে এমন ঘটনা ঘটার মানে হলো উচ্চশিক্ষার অবকাঠামোগত অবহেলা এখন সীমা ছাড়িয়ে গেছে। মেডিকেল শিক্ষার্থীদের জন্য নিরাপদ ও আরামদায়ক আবাসন অত্যন্ত জরুরি, কারণ তারা শুধুমাত্র ক্লাসে নয়, হাসপাতালেও চিকিৎসা কার্যক্রমে নিয়োজিত থাকেন। এমন অবস্থায় সঠিক পরিকল্পনা ও বরাদ্দ ছাড়া এই সংকট কাটিয়ে ওঠা সম্ভব নয়।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে। অনেকেই কলেজ প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করে লিখেছেন, শিক্ষার্থীদের প্রতি অবহেলার পরিণতি হতে পারে মারাত্মক। তারা মনে করেন, সরকার ও নীতিনির্ধারকদের এখনই পদক্ষেপ নেওয়া উচিত যেন ভবিষ্যতে এমন সংকটে আর কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান না পড়ে।
বর্তমানে প্রশ্ন উঠেছে, সরকার বা সংশ্লিষ্ট দপ্তর কতটা দ্রুত এই সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসবে। কারণ, যদি দীর্ঘ সময় ধরে একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ থাকে, তাহলে দেশের শীর্ষস্থানীয় চিকিৎসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা শিক্ষাজীবনে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে। এ অবস্থায় সবার প্রত্যাশা, খুব শীঘ্রই কার্যকর পরিকল্পনা গ্রহণ করে ক্যাম্পাসের অবকাঠামো মেরামত এবং উন্নয়নের কাজ শুরু হবে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ দেশের প্রাচীন ও সম্মানজনক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি। এখানে প্রতি বছর দেশের সেরা মেধাবীরা চিকিৎসা শিক্ষার জন্য ভর্তি হন। এমন একটি প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের জীবন নিয়ে ঝুঁকি তৈরি হওয়া অত্যন্ত দুঃখজনক। তাই ভবন সংস্কার, নতুন আবাসিক হল নির্মাণ, এবং শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জরুরি ভিত্তিতে কাজ শুরু হওয়া দরকার। প্রশাসনের উচিত স্বচ্ছ পরিকল্পনা প্রকাশ করা এবং শিক্ষার্থীদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ বজায় রাখা যাতে তারা আস্থা ফিরে পায় এবং শিক্ষা কার্যক্রম দ্রুত স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা যায়।