
তীব্র তাপপ্রবাহের পর বর্ষার আগমনী বার্তা নিয়ে আসছে দেশের আবহাওয়ার পরিবর্তন
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের (বিএমডি) পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী পাঁচ দিন (১১ জুন থেকে ১৫ জুন) দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বৃষ্টিপাত, বজ্রঝড় এবং দমকা হাওয়া বয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। দেশের পূর্ব ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলসহ বেশিরভাগ এলাকায় বিক্ষিপ্তভাবে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত হতে পারে, কোথাও কোথাও ভারি বৃষ্টি ও বজ্রপাতের সম্ভাবনাও রয়েছে। আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন, এ বৃষ্টিপাতই বর্ষা আগমনের পূর্ব লক্ষণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা সবচেয়ে বেশি থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এসব অঞ্চলে মেঘ সঞ্চালন এবং দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে আগত আর্দ্র বায়ুর কারণে বজ্রঝড়সহ ভারি বৃষ্টি হতে পারে। ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, রাজশাহী ও রংপুর বিভাগেও বিভিন্ন মাত্রায় বৃষ্টিপাত দেখা দিতে পারে। দেশের দক্ষিণ ও মধ্যাঞ্চলেও ধীরে ধীরে বর্ষার প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করবে।
গত কয়েক সপ্তাহ ধরে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে তাপপ্রবাহ চলছে। বিশেষ করে নীলফামারী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও ফেনী জেলায় মাঝারি থেকে তীব্র তাপপ্রবাহের রেকর্ড রয়েছে। তাপমাত্রা অনেক স্থানে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উঠেছে, যার ফলে জনজীবন চরমভাবে দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে। তবে ১২ জুনের পর থেকে এই তাপপ্রবাহ ধীরে ধীরে কমে আসবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। বৃষ্টির কারণে দিনের তাপমাত্রা কিছুটা হ্রাস পেলেও রাতের তাপমাত্রা উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন নাও হতে পারে।
আবহাওয়াবিদ এ কে এম নাজমুল হক জানান, “বর্তমান বৃষ্টিপাত ও মেঘলা আবহাওয়া বর্ষা মৌসুম শুরুর একটি স্পষ্ট লক্ষণ। ১৩ বা ১৪ জুনের মধ্যে বর্ষা বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে প্রবেশ করতে পারে এবং ১৫ জুনের মধ্যে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়বে।” প্রতিবারের মতো এবছরও বর্ষা জুন মাসের মাঝামাঝি সময়ে শুরু হয়ে অক্টোবর পর্যন্ত চলতে পারে। বর্ষা মৌসুম দেশের কৃষি, নদীপথ ও প্রাকৃতিক পরিবেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হলেও এর সঙ্গে কিছু ঝুঁকিও যুক্ত থাকে।
বর্ষা ও প্রাক-বর্ষা মৌসুমে বজ্রপাত একটি সাধারণ ও প্রাণঘাতী সমস্যা। প্রতিবছরই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বজ্রপাতে প্রাণহানির ঘটনা ঘটে থাকে। বিশেষ করে গ্রামীণ অঞ্চলের কৃষক ও খোলা জায়গায় কাজ করা মানুষ সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মুখে থাকেন। বজ্রঝড়ের সময় নিরাপদ স্থানে অবস্থান, খোলা মাঠ বা গাছের নিচে আশ্রয় না নেওয়া এবং বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি থেকে দূরে থাকা—এসব সতর্কতা মেনে চললে প্রাণহানি এড়ানো সম্ভব।
আগামী পাঁচ দিন আবহাওয়ার ধারা ধীরে ধীরে পরিবর্তিত হবে। ১১ জুন থেকে বিভিন্ন অঞ্চলে বিক্ষিপ্তভাবে বৃষ্টি শুরু হবে, ১২ জুন থেকে তা বাড়বে এবং তাপপ্রবাহ কিছুটা প্রশমিত হবে। ১৩ থেকে ১৪ জুনের মধ্যে বর্ষার প্রবেশের সম্ভাবনা রয়েছে এবং ১৫ জুনের মধ্যে সারাদেশেই বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ও বিস্তার বৃদ্ধি পাবে।
চট্টগ্রাম ও সিলেটে বর্ষণের মাত্রা বেশি থাকবে। ঢাকা, খুলনা ও বরিশালে মাঝারি বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। রাজশাহী ও রংপুর অঞ্চলে হালকা বৃষ্টি হলেও, দমকা হাওয়া ও বজ্রপাত হতে পারে। পুরো সপ্তাহজুড়ে আকাশ আংশিক মেঘলা থাকতে পারে এবং হঠাৎ হঠাৎ দমকা হাওয়ার সঙ্গে বজ্রঝড় হতে পারে।
সরকারি দপ্তর, কৃষক ও সাধারণ মানুষকে এই সময় সচেতনভাবে পরিকল্পনা নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। শহরাঞ্চলে জলাবদ্ধতা ও যানজট সমস্যা মাথায় রেখে আগেভাগেই প্রস্তুতি নেওয়া উচিত। গ্রামীণ অঞ্চলে কৃষিজ উৎপাদন ও ফসল রক্ষায় সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। বজ্রপাত প্রতিরোধে সচেতনতা বৃদ্ধি ও স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতাও জরুরি।
সবশেষে বলা যায়, বর্ষা বাংলাদেশের প্রাকৃতিক ছন্দের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি যেমন শস্য উৎপাদনে সহায়তা করে, তেমনি বজ্রপাত ও জলাবদ্ধতার মতো সমস্যাও তৈরি করতে পারে। তাই এই মৌসুমে প্রাকৃতিক উপহার গ্রহণের পাশাপাশি এর ঝুঁকি মোকাবিলার প্রস্তুতিও থাকতে হবে। আগামী দিনগুলোতে আবহাওয়া পরিস্থিতি আরও পরিবর্তনশীল হবে, তাই নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে প্রতিদিনের আপডেট জেনে সচেতনভাবে চলাফেরা করাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।