IMF অনুমোদন করেছে 1.33 বিলিয়ন ডলারের বড় সহায়তা প্যাকেজ বাংলাদেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে

IMF-এর আর্থিক প্যাকেজ বাংলাদেশের মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, প্রবৃদ্ধি বাড়ানো এবং জলবায়ু সহনশীলতা নিশ্চিত করবে

বাংলাদেশের অর্থনীতি সাম্প্রতিক সময়ে নানা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হলেও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (IMF) নতুন এক অর্থনৈতিক সহায়তা প্যাকেজ অনুমোদন করেছে। গত ২৩ জুন, ২০২৫ তারিখে IMF বাংলাদেশের জন্য মোট ১.৩৩ বিলিয়ন ডলারের আর্থিক সহায়তা নিশ্চিত করেছে। এই অর্থ সরাসরি দেশের মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়ানোসহ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় কাজে লাগানো হবে।

এই প্যাকেজের অন্তর্ভুক্ত রয়েছে এক্সটেন্ডেড ক্রেডিট ফ্যাসিলিটি (ECF) এবং এক্সটেন্ডেড ফান্ড ফ্যাসিলিটি (EFF) থেকে ৮৮৪ মিলিয়ন ডলার। এই অর্থ বাংলাদেশ সরকারের চলতি অর্থনৈতিক সমস্যা মোকাবেলার জন্য সহায়তা করবে। অন্যদিকে, রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি  ফ্যাসিলিটি (RSF) থেকে ৪৫৩ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ পাওয়া গেছে, যা মূলত জলবায়ু সংক্রান্ত প্রকল্প ও কাঠামোগত সংস্কারে ব্যবহৃত হবে। এছাড়া, বাংলাদেশকে দেওয়া হয়েছে ৫৬৭.২ মিলিয়ন স্পেশাল ড্রয়িং রাইটস (SDRs), যা প্রায় ৭৫০ মিলিয়ন ডলারের সমমূল্য এবং দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ জোরদার করবে।

বাংলাদেশ বর্তমানে বেশ কয়েকটি অর্থনৈতিক সমস্যার সম্মুখীন। বিশ্ববাজারের অস্থিরতা, রপ্তানি খাতে ধীরগতি, প্রবাসীদের পাঠানো অর্থের হ্রাস এবং আমদানির ব্যয় বৃদ্ধির কারণে মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে গেছে। দেশের মুদ্রাস্ফীতি এখন দীর্ঘদিন ধরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের লক্ষ্যমাত্রার বাইরে রয়েছে। এ কারণে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে যাচ্ছে। এছাড়া, দেশের টাকার মান ইউএস ডলারের তুলনায় অবনতি হওয়ায় আমদানি খরচ বেড়ে দেশের চলতি হিসাবের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমে অনুমান করা হচ্ছে চলতি অর্থবছরে মাত্র ৪.৮ শতাংশ হবে, যা পূর্ববর্তী অনুমানের ৬.৫ শতাংশের তুলনায় কম।

IMF বাংলাদেশ সরকারের অর্থনৈতিক সংস্কার নিয়ে ইতিবাচক ধারায় রয়েছে বলে জানিয়েছে, তবে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষায় আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। তহবিলের শর্ত হিসেবে IMF আরও বলেছে, মুদ্রাস্ফীতি কমাতে মুদ্রানীতি শক্তিশালী করতে হবে, কর আদায় বাড়াতে হবে, বিশেষ করে ডিজিটাল পদ্ধতি ব্যবহার করে, এবং জ্বালানি ও সার ভর্তুকি সংস্কার করতে হবে যাতে বাজেটের উপর চাপ কমে। এছাড়া, বন্যা প্রবণ ও উপকূলীয় অঞ্চলে জলবায়ু সহনশীলতা বাড়াতে বিশেষ উদ্যোগ নিতে হবে।

বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী IMF-এর এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, এই অর্থের মাধ্যমে সরকার আর্থিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে পারবে, দরিদ্র ও দুর্বল জনগোষ্ঠীর জন্য সামাজিক নিরাপত্তা বৃদ্ধি করতে পারবে এবং জলবায়ু অভিযোজন প্রকল্প দ্রুত এগিয়ে নিতে পারবে। তিনি আরো জানিয়েছেন, RSF থেকে পাওয়া অর্থের একটি বড় অংশ নবায়নযোগ্য শক্তি, উপকূলীয় সুরক্ষা ও সবুজ অর্থনীতির উন্নয়নে ব্যয় হবে। এটি বাংলাদেশের দীর্ঘমেয়াদী টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ।

জনসাধারণের দৃষ্টিকোণ থেকে, এই অর্থায়ন দেশের মুদ্রার মূল্য স্থিতিশীল রাখতে সাহায্য করবে, আমদানির জন্য প্রয়োজনীয় জ্বালানি ও খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করবে এবং স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও সামাজিক সেবা খাতে বাজেট বাড়ানো সম্ভব হবে। এছাড়া, অভ্যন্তরীণ ঋণের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে সুদের হার নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করবে। তবে, IMF-এর শর্ত অনুযায়ী কিছু খাতে ভর্তুকি কমিয়ে ইউটিলিটি খরচ বৃদ্ধি পেতে পারে, যা ধীরে ধীরে বাস্তবায়ন করা হবে যাতে সাধারণ মানুষের ওপর অতিরিক্ত চাপ না পড়ে।

আন্তর্জাতিক পর্যায়ে, বাংলাদেশের এই তহবিল পাওয়ার অর্থ হলো দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও জলবায়ু প্রতিরোধে সফল প্রচেষ্টার স্বীকৃতি। বিশেষ করে RSF-এর আওতায় অর্থ পেতে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার কম আয়ের দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম হয়েছে, যা জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশের জন্য বিশেষ প্রণোদনা। IMF বাংলাদেশকে একটি উন্নয়নশীল দেশের জন্য ‘মডেল’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে, যারা কঠোর আর্থিক ব্যবস্থাপনা ও পরিবেশ রক্ষার কাজ করে যাচ্ছে বিশ্ব অর্থনীতির অনিশ্চয়তার মাঝেও।

বাংলাদেশের জন্য এই ১.৩৩ বিলিয়ন ডলারের প্যাকেজ শুধু অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলার একটি হাতিয়ার নয়, বরং এটি দেশের টেকসই উন্নয়ন ও জলবায়ু অভিযোজনের একটি শক্তিশালী পদক্ষেপ। এটি দেশের অর্থনীতি স্থিতিশীল করবে এবং দুর্বল ও ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীকে রক্ষা করবে। সরকারি খাতে সামাজিক নিরাপত্তা বর্ধিত হওয়া, অবকাঠামো উন্নয়ন, নবায়নযোগ্য শক্তি খাতে বিনিয়োগ বাড়ানো এবং বন্যা ও জলবায়ু ঝুঁকি কমানোর কার্যক্রম দ্রুততর করার আশা করা যাচ্ছে।

অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, এই তহবিল বাংলাদেশকে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক চাপ থেকে কিছুটা মুক্তি দেবে এবং দেশটির প্রবৃদ্ধির ধারা পুনরায় উন্নত করবে। তবে সরকারের উচিত হবে IMF-এর শর্তগুলোর সঙ্গে সমন্বয় রেখে সুদূরপ্রসারী নীতিমালা গ্রহণ করা, যাতে জনসাধারণের জীবনমান উন্নত হয় এবং দেশের অর্থনীতি দারিদ্র্য মুক্তি পথে এগিয়ে যায়।

অবশেষে, IMF-এর এই আর্থিক সহায়তা বাংলাদেশকে একটি জটিল বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অবস্থার মধ্যেও টেকসই উন্নয়ন, আর্থিক স্থিতিশীলতা এবং পরিবেশগত স্থায়িত্ব অর্জনের পথে এগিয়ে নিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

Source: The Daily Star, June 23, 2025 

Related Posts

Rising Dengue Cases in Bangladesh: 42 Deaths and Nearly 10,000 Hospitalized in 2025

Bangladesh reports 42 dengue deaths and nearly 10,000 hospitalizations in 2025 as the outbreak spreads beyond Dhaka. Health experts urge immediate action to prevent another national crisis.

30 Charged in Abu Sayed Murder: Justice Process Begins Under ICT in 2025

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You Missed

Rising Dengue Cases in Bangladesh: 42 Deaths and Nearly 10,000 Hospitalized in 2025

  • By Chris
  • June 30, 2025
  • 13 views
Rising Dengue Cases in Bangladesh: 42 Deaths and Nearly 10,000 Hospitalized in 2025

30 Charged in Abu Sayed Murder: Justice Process Begins Under ICT in 2025

  • By Chris
  • June 30, 2025
  • 36 views
30 Charged in Abu Sayed Murder: Justice Process Begins Under ICT in 2025

July Charter 2025 in Limbo as Political Talks Stall Over Key Reforms

  • By Chris
  • June 30, 2025
  • 52 views
July Charter 2025 in Limbo as Political Talks Stall Over Key Reforms

Iran Strongly Condemns Former US President Trump’s Claim of Saving Khamenei in 2025, Calls Remarks Disrespectful

  • By Chris
  • June 28, 2025
  • 68 views
Iran Strongly Condemns Former US President Trump’s Claim of Saving Khamenei in 2025, Calls Remarks Disrespectful

4 killed, 14 injured in bus-truck collision on Dhaka-Mawa Expressway

  • By Chris
  • June 28, 2025
  • 52 views
4 killed, 14 injured in bus-truck collision on Dhaka-Mawa Expressway

Bangladesh Election Commission Sets September Deadline for Poll Materials Procurement-

  • By Chris
  • June 27, 2025
  • 43 views
Bangladesh Election Commission Sets September Deadline for Poll Materials Procurement-