5 সদস্যের BNP প্রতিনিধিদল চীনের উদ্দেশ্যে রওনা, কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদারে নতুন পদক্ষেপ

কমিউনিস্ট পার্টির আমন্ত্রণে পাঁচ দিনের সফরে গেলেন আমীর খসরুর নেতৃত্বে BNP নেতারা

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (BNP)’র একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল আজ শনিবার সকালে চীনের রাজধানী বেইজিংয়ের উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করেছে। চীনের ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টি অব চায়না (CPC)-এর আমন্ত্রণে পাঁচ দিনের এই সফর অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এই সফর কেবলমাত্র সৌজন্য নয়, বরং বাংলাদেশের রাজনীতি, কূটনীতি এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের দিক থেকে এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

এই প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এবং সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তাঁর সঙ্গে রয়েছেন দলের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মাসুদ আহমেদ তালুকদার, সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নাজমুল হাসান এবং নির্বাহী কমিটির সদস্য শামসুদ্দিন দিদার। বিএনপি থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়েছে, এই সফরের মূল উদ্দেশ্য চীনের সঙ্গে দলীয় পর্যায়ে সম্পর্ক জোরদার করা, রাজনৈতিক মতবিনিময় এবং আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা।

চীনের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। অতীতে চীনা দূতাবাস ও প্রতিনিধিদল একাধিকবার বিএনপি কার্যালয় পরিদর্শন করেছে এবং শীর্ষ নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠক করেছে। এমনকি ২০১৯ সালে চীনের প্রতিনিধি দল ঢাকায় এসে বিএনপির তৎকালীন মহাসচিব ও অন্যান্য নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে আলোচনা করে। সেই সম্পর্কের ধারাবাহিকতাতেই এবার বিএনপি একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিনিধিদল পাঠালো চীনে।

এই সফরের পটভূমি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, এটি এমন এক সময়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে যখন বাংলাদেশে জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরবর্তী রাজনৈতিক উত্তেজনা এখনো কিছুটা বিরাজমান। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিএনপির রাজনৈতিক বিরোধ, মানবাধিকার পরিস্থিতি এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশ নিয়ে আলোচনার প্রেক্ষাপটে এই সফরকে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

বিশ্ব রাজনীতিতে চীন আজ একটি অন্যতম প্রভাবশালী শক্তি। দক্ষিণ এশিয়ায় চীনের উপস্থিতি দিন দিন বাড়ছে। তারা বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, নেপাল ও পাকিস্তানে রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করছে। এই প্রেক্ষাপটে চীন কেবল সরকারপক্ষ নয়, বিরোধী দলগুলোর সঙ্গেও সম্পর্ক রাখার কৌশল অনুসরণ করছে, যা আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে তাদের ভারসাম্য কূটনীতির অংশ। বিএনপির সঙ্গে চীনের এই সম্পর্ক সেই কৌশলেরই অংশ।

এই সফরের মাধ্যমে চীনা কমিউনিস্ট পার্টি ও বিএনপির মধ্যে রাজনৈতিক মতবিনিময়, প্রশিক্ষণমূলক আলোচনা, সাংগঠনিক কাঠামো ও কৌশলগত পরিকল্পনা বিষয়ক আলোচনা হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। চীন তার মডেল অনেক উন্নয়নশীল দেশের সামনে তুলে ধরতে চায়, আর বিএনপি এই সফরের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মে নিজেদের সক্রিয়তা তুলে ধরতে আগ্রহী।

অন্যদিকে এই সফরের মাধ্যমে বিএনপি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিজেদের অবস্থান জানান দিচ্ছে। তারা দেখাতে চাইছে যে, শুধু দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতেই নয়, বরং আন্তর্জাতিক সম্পর্কেও দলটি সম্পৃক্ত ও সক্রিয়। এই সফরের মাধ্যমে বিএনপি তার রাজনৈতিক ইমেজ আন্তর্জাতিক পর্যায়ে শক্তিশালী করতে চাইছে।

চীনও এই সফরের মাধ্যমে একটি বার্তা দিচ্ছে যে, তারা বাংলাদেশে সব দলের সঙ্গেই সম্পর্ক রক্ষা করতে চায়। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সঙ্গে চীনের সম্পর্ক আগে থেকেই দৃঢ়। এবার বিরোধী দলের প্রতিনিধিদলকে আমন্ত্রণ জানিয়ে চীন দেখাচ্ছে যে, তারা বাংলাদেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যতের সব পক্ষের সঙ্গেই সম্পর্ক গড়ে তুলতে আগ্রহী।

চীনের সঙ্গে বিএনপির এই সফর ভবিষ্যতে নতুন কিছু যৌথ উদ্যোগ, শিক্ষা বা গবেষণা ভিত্তিক বিনিময় এবং রাজনৈতিক পর্যায়ে কৌশলগত সহযোগিতার পথ খুলে দিতে পারে। একইসঙ্গে এটি বিএনপির জন্য দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এক ইতিবাচক ইমেজ তৈরির সুযোগও।

বর্তমানে বিএনপি নানা ধরনের রাজনৈতিক চাপে রয়েছে। দলটি সংসদের বাইরে অবস্থান করছে, এবং সরকারের বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক অধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছে। এই পরিস্থিতিতে একটি শক্তিশালী আন্তর্জাতিক যোগাযোগ দলটির পক্ষে নতুন ধরণের সমর্থন বা বৈদেশিক মনোযোগ আনতে পারে। চীনের মতো একটি শক্তিশালী দেশের সঙ্গে ইতিবাচক সম্পর্ক থাকা দলের কৌশলগত অবস্থানকে আরও মজবুত করবে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই সফর বাংলাদেশে চীনের কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক কৌশলের একটি অংশ। চীন চায় তাদের প্রভাব এই অঞ্চলে আরও বৃদ্ধি পাক এবং তারা চায় যেন যে দলই ক্ষমতায় থাকুক, তাদের স্বার্থ অক্ষুণ্ন থাকে। ফলে চীন বিএনপির মতো গুরুত্বপূর্ণ বিরোধী দলের সঙ্গেও সম্পর্ক রাখতে উৎসাহী।

সবমিলিয়ে এই সফর কেবল একটি রাজনৈতিক সৌজন্য সফর নয়। বরং এটি বিএনপির আন্তর্জাতিক যোগাযোগ জোরদার, কূটনৈতিক ভারসাম্য রক্ষা, এবং নিজেদের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক কৌশল বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে বিবেচিত। এই সফরের ফলাফল বিএনপির ভবিষ্যৎ রাজনীতিতে কতটা প্রভাব ফেলবে, তা সময়ই বলে দেবে, তবে এটুকু নিশ্চিত যে, আন্তর্জাতিক মহলে বিএনপি আবার আলোচনায় এসেছে।

সূত্র: The Daily Star

Related Posts

Leaked Audio Reveals Sheikh Hasina Ordered Deadly Crackdown on 2024 Bangladesh Protesters

Leaked audio reveals Sheikh Hasina ordered lethal force on 2024 Bangladesh protesters; UN confirms over 1,400 killed in deadly crackdown.

Bangladesh’s Economy Grew 50% in 8 Years, But Job Creation Lagged Behind

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You Missed

Leaked Audio Reveals Sheikh Hasina Ordered Deadly Crackdown on 2024 Bangladesh Protesters

  • By Chris
  • August 4, 2025
  • 93 views
Leaked Audio Reveals Sheikh Hasina Ordered Deadly Crackdown on 2024 Bangladesh Protesters

Bangladesh’s Economy Grew 50% in 8 Years, But Job Creation Lagged Behind

  • By Chris
  • July 23, 2025
  • 122 views
Bangladesh’s Economy Grew 50% in 8 Years, But Job Creation Lagged Behind

Bangladesh Urgently Seeks U.S. Trade Talks to Avoid 35% Tariff on Garment Exports

  • By Chris
  • July 23, 2025
  • 129 views
Bangladesh Urgently Seeks U.S. Trade Talks to Avoid 35% Tariff on Garment Exports

Death Toll Rises to 31 in Bangladesh Air Force Jet Crash at Dhaka School

  • By Chris
  • July 22, 2025
  • 114 views
Death Toll Rises to 31 in Bangladesh Air Force Jet Crash at Dhaka School

Bangladesh Air Force Jet Crash Kills 27, Including 25 Children, at Dhaka School

  • By Chris
  • July 22, 2025
  • 140 views
Bangladesh Air Force Jet Crash Kills 27, Including 25 Children, at Dhaka School

Chief Justice Appoints 2 Justices — Justice Rezaul Haque and Justice Farah Mahbub — as Chamber Judges of Supreme Court

  • By Chris
  • July 21, 2025
  • 119 views
Chief Justice Appoints 2 Justices — Justice Rezaul Haque and Justice Farah Mahbub — as Chamber Judges of Supreme Court