
দীর্ঘ ১০ দিনের ছুটি শেষে কর্মস্থলে যোগ দিতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে রাজধানীতে ফিরছে মানুষ, রেলস্টেশন, লঞ্চঘাট ও বাস টার্মিনালে উপচে পড়া ভিড়।
ঈদুল আজহার ছুটি শেষ হয়েছে গত বৃহস্পতিবার। এর পরের দুদিন ছিল শুক্রবার ও শনিবারের সাপ্তাহিক ছুটি। ফলে সরকারি-বেসরকারি অফিসগুলোতে টানা ১০ দিনের দীর্ঘ ছুটি উপভোগ করেছেন লাখো মানুষ। এই ছুটির অবসান ঘটছে আজ শনিবার। আগামীকাল রোববার (১৫ জুন) থেকে পুরোদমে খুলে যাচ্ছে দেশের সরকারি অফিস, আদালত, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও অন্যান্য কর্মক্ষেত্র। ফলে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে কর্মজীবীরা ফিরতে শুরু করেছেন রাজধানী ঢাকায়।
শনিবার সকাল থেকেই ঢাকামুখী মানুষের ঢল নামে রাজধানীর প্রধান প্রবেশমুখগুলোতে। সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল, কমলাপুর রেলস্টেশন, গাবতলী ও সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালসহ গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে দেখা যায় ঘরমুখো মানুষের বিপুল ভিড়। পরিবার-পরিজন নিয়ে ফিরছেন কর্মজীবী মানুষ। যাত্রীবাহী যানবাহনের চাপ সামাল দিতে হিমশিম খেতে হয়েছে পরিবহন কর্তৃপক্ষকেও।
রেলপথে ভিড়, দাঁড়িয়ে ফিরেছেন অনেক যাত্রী
রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশনে সকাল থেকেই ট্রেনযাত্রীদের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। বেশিরভাগ ট্রেনই যাত্রীতে ঠাসা। অনেক যাত্রীকে দাঁড়িয়ে অথবা ট্রেনের ফাঁকা স্থানে বসে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হয়েছে। যাত্রীরা বলছেন, এবারের ঈদে যাত্রার তুলনায় ফেরা তুলনামূলক সহজ হলেও ভিড় এড়ানো যায়নি।
শফিক নামের এক যাত্রী জানান, “এবার একটু বেশি ছুটি পেয়েছি। তাই পরিবার নিয়ে গ্রামের বাড়ি গিয়েছিলাম। আগেই টিকিট কেটে রেখেছিলাম, ফলে সমস্যায় পড়িনি। তবে ট্রেনে যাত্রীর চাপ ছিল প্রচুর।”
অন্য এক চাকরিজীবী, নিলয় বলেন, “সরকারি ছুটি একটু বেশি থাকায় সময় নিয়ে পরিবার নিয়ে যাওয়া-আসা করতে পেরেছি। ভিড় থাকলেও এবারের যাত্রা মোটামুটি স্বস্তিদায়ক।”
তবে অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা যেহেতু ঈদে ছুটি পাননি, তাই তাদের অনেককেই আজও ঢাকা ছাড়তে দেখা গেছে। ফলে শুধু ঢাকামুখী নয়, ঢাকাছাড়া ট্রেনগুলোতেও ছিল যাত্রীদের প্রচণ্ড ভিড়।
সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে যাত্রী চাপে সড়কে যানজট
ঢাকার সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালেও ভোর থেকেই শুরু হয় ফিরতি যাত্রীদের স্রোত। দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে লঞ্চযোগে ফিরেছেন হাজার হাজার মানুষ। সদরঘাট এলাকায় লঞ্চ থেকে নামা যাত্রীদের বাসে উঠতে না পেরে অনেককেই হেঁটে গন্তব্যে যেতে দেখা গেছে।
বরিশাল থেকে আসা রবিউল নামে একজন বলেন, “লঞ্চে চাপ ছিল, কিন্তু ভোগান্তি কম হয়েছে। ঢাকায় এসে বাসে উঠতে পারিনি, তাই হেঁটেই বাসার পথে রওনা দিয়েছি।”
লঞ্চ টার্মিনালে মানুষের ভিড়ের কারণে সদরঘাট থেকে তাঁতিবাজার মোড় পর্যন্ত সড়কে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। গণপরিবহন সংকট এবং অতিরিক্ত ভাড়ার অভিযোগও ছিল যাত্রীদের মধ্যে।
সড়কে ব্যস্ততা, বাসস্ট্যান্ডে লম্বা লাইন
গাবতলী, মহাখালী ও সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালেও দৃশ্য ছিল একই। দূরপাল্লার বাসগুলো একের পর এক ঢাকায় প্রবেশ করছে, প্রতিটি বাসেই ছিলぎ পূর্ণ যাত্রী। নামার পর স্বস্তি প্রকাশ করেছেন অনেক যাত্রী, তবে শহরের অভ্যন্তরে পৌঁছাতে তাদের পড়তে হয়েছে যানজট ও গণপরিবহন সংকটে।
গণপরিবহন ও সিএনজিচালিত অটোরিকশায় ভাড়া বেশি নেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন অনেকে। যদিও ট্রাফিক বিভাগ বলছে, যাত্রীদের নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছে দিতে তারা বাড়তি নজরদারি চালাচ্ছে।
অফিস শুরুর আগের দিন রাজধানীতে ফিরছে প্রাণচাঞ্চল্য
ঈদের ছুটির পর এই দীর্ঘ বিরতি শেষে রাজধানী আবার ফিরে পাচ্ছে তার চিরচেনা রূপ। ব্যস্ততা, যানজট, কর্মমুখরতা—সব মিলিয়ে ঢাকার রাস্তাঘাট আবারও হয়ে উঠছে কর্মচঞ্চল। বহু মানুষ ইতোমধ্যেই অফিসের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন। বিশেষ করে যাদের সন্তানদের স্কুল রয়েছে, তারাও ফিরেছেন শনিবারের মধ্যেই।
সাপ্তাহিক ছুটির পর আগামীকাল রোববার সকাল থেকেই খুলে যাবে সব সরকারি দপ্তর, আদালত, ব্যাংক, স্কুল, কলেজ ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। ফলে আজ সন্ধ্যার পর রাজধানীর মূল রাস্তাগুলোয় আরো চাপ বাড়বে বলে ধারণা করছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
জনগণের কিছু দাবি ও প্রত্যাশা
ফিরতি যাত্রায় যেন কেউ ভোগান্তির শিকার না হন, সেজন্য গণপরিবহন কর্তৃপক্ষ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি রয়েছে সাধারণ মানুষের একাধিক প্রত্যাশা। ভাড়া নিয়ন্ত্রণ, যানজট নিরসন এবং নিরাপদ যাতায়াত ব্যবস্থার ওপর জোর দিয়েছে তারা।
সরকারের তরফ থেকেও বলা হয়েছে, ঈদ-পরবর্তী সময় যাত্রী সেবা নিশ্চিত করতে সবধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। ঢাকায় ফিরতি যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে অতিরিক্ত ট্রেন ও বাসের ব্যবস্থা রাখা হয়েছিল, যা এখনো অব্যাহত রয়েছে।
উপসংহার
ঈদের ছুটি শেষে কর্মজীবী মানুষের রাজধানীতে ফেরা যেন একটি বার্ষিক চিত্র। এবারের ছুটিও ছিল দীর্ঘ এবং স্বস্তিদায়ক। তবে ফেরার পথে ভিড়, যানজট এবং পরিবহন সংকট পুরনো সমস্যাগুলো আবারও মনে করিয়ে দিয়েছে। আগামীকাল থেকে পুরোদমে খুলছে অফিস-আদালত, আবারও শুরু হচ্ছে কর্মব্যস্ত জীবন। এই বাস্তবতায় যাত্রীসাধারণ চাইছেন, ভবিষ্যতে যেন পরিকল্পিত যাত্রা ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ফিরে আসা আরও সহজ, নিরাপদ এবং স্বস্তিদায়ক হয়।