যুক্তরাষ্ট্রের চাপ: আমদানি শুল্ক কমানোর আহ্বান

বাংলাদেশকে আমেরিকান পণ্যের উপর আমদানি শুল্ক কমানোর জন্য লিখিত প্রস্তাব জমা দিতে বলেছে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেড রিপ্রেজেন্টেটিভ (USTR)। যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ, বাংলাদেশের শুল্ক কাঠামো আমেরিকান পণ্যের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা হ্রাস করছে। এর ফলে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ঘাটতি বাড়ছে, যা দুই দেশের অর্থনৈতিক সম্পর্কেও প্রভাব ফেলছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুল্ক কমালে স্থানীয় শিল্পের উপর চাপ বাড়তে পারে। পাশাপাশি, মার্কিন ক্রেতারা এই সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশি রপ্তানিকারকদের উপর দাম কমানোর চাপ সৃষ্টি করতে পারে। কম শুল্কের সুবিধাভোগী দেশগুলোর দিকে মার্কিন রপ্তানিকারকদের ঝুঁকে যাওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে। ফলে বাংলাদেশের রপ্তানি খাত বড় ধরনের প্রতিযোগিতায় পড়তে পারে।

তুলা আমদানিতে বাংলাদেশের শীর্ষস্থান ধরে রাখা

২০২৫-২৬ অর্থবছরে বাংলাদেশ বিশ্বের শীর্ষ তুলা আমদানিকারক দেশ হিসেবে অবস্থান ধরে রাখবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে USDA (মার্কিন কৃষি বিভাগ)। এই সময়ে বাংলাদেশের তুলা আমদানির পরিমাণ ৮.৫ মিলিয়ন বেল ছাড়িয়ে যেতে পারে। এর প্রধান কারণ তৈরি পোশাক শিল্পের ক্রমবর্ধমান কাঁচামালের চাহিদা।

তবে ডলার সংকট, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের উপর চাপ এবং বিশ্ববাজারে তুলার দামের ঊর্ধ্বগতি বাংলাদেশের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিকল্প কাঁচামাল ব্যবহারের চিন্তা-ভাবনা, প্রযুক্তিনির্ভর উৎপাদন পদ্ধতি এবং স্থানীয় উৎপাদন বৃদ্ধির উপর বিশেষজ্ঞরা গুরুত্ব দিচ্ছেন।

আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের আর্থিক সহায়তা

বাংলাদেশ সরকার আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (IMF) থেকে ১.৩ বিলিয়ন ডলার ঋণের অনুমোদন পেয়েছে। এই অর্থ দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ শক্তিশালীকরণ, মুদ্রানীতি নমনীয়করণ ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে ব্যবহৃত হবে।

একইসঙ্গে, বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে ৮৫০ মিলিয়ন ডলারের দুটি অর্থায়ন চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। যার মাধ্যমে চট্টগ্রামের বে টার্মিনাল মেরিন অবকাঠামো উন্নয়ন, বাণিজ্য সক্ষমতা বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থার আধুনিকায়নে সহায়তা করা হবে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশের অভ্যন্তরীণ ও বৈশ্বিক বাণিজ্য উন্নয়নের সুযোগ সৃষ্টি হবে।

রাজস্ব প্রশাসনের বড় পরিবর্তন

বাংলাদেশ সরকার জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (NBR) বিলুপ্ত করে দুটি নতুন ইউনিট গঠন করেছে:

• রাজস্ব নীতি বিভাগ

• রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ

এই পদক্ষেপের মাধ্যমে রাজস্ব আদায়ে স্বচ্ছতা ও দক্ষতা বৃদ্ধির পাশাপাশি প্রশাসনিক জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হবে। ডিজিটাল কর ব্যবস্থাপনা, স্বয়ংক্রিয় তথ্য বিশ্লেষণ এবং করদাতা পরিষেবা উন্নয়নের মাধ্যমে রাজস্ব সংগ্রহ আরও সহজ ও কার্যকর হবে।

বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি ও ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ

বর্তমানে বাংলাদেশের বৈদেশিক বাণিজ্য ঘাটতি উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে চলেছে। আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি, রপ্তানি আয় স্থবিরতা, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা — এসব মিলিয়ে দেশের অর্থনীতি চাপের মুখে রয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, রপ্তানি পণ্য বৈচিত্র্যকরণ, প্রযুক্তিনির্ভর শিল্পায়ন, মানবসম্পদ উন্নয়ন এবং নতুন রপ্তানি বাজার খোঁজা ছাড়া এই ঘাটতি কাটিয়ে ওঠা কঠিন হবে। বাণিজ্য-বান্ধব নীতি গ্রহণ, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা কমানো এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নও জরুরি।

সরকারের গৃহীত বিভিন্ন নীতিমালা ও প্রকল্পের যথাযথ বাস্তবায়ন হলে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা সম্ভব হবে। বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে গুণগত মান, সময়োপযোগী কৌশল এবং উদ্ভাবনী ধারণার উপর জোর দিতে হবে।

সারসংক্ষেপ

২০২৫ সালের মে মাসে বাংলাদেশের বাণিজ্য খাতে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন ঘটছে। যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক কমানোর চাপ, তুলা আমদানির উচ্চতা, আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের আর্থিক সহায়তা এবং রাজস্ব প্রশাসনের সংস্কার — সবকিছুই বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ভবিষ্যতের জন্য দিকনির্দেশক। চ্যালেঞ্জের মুখেও দেশের সামনে সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে, যা সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত ও দক্ষ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বাস্তবে রূপ দেওয়া সম্ভব।