
ডিজিটাল DSR ও লক্ষ্যভিত্তিক ভাতা ও খাদ্যসহায়তার মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচন ও জীবিকা উন্নয়নে পদক্ষেপ নেওয়া হবে
বাংলাদেশ সরকারের ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে দরিদ্র ও ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর কল্যাণে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে মোট Tk ১,১৬,৭৩১ কোটি বরাদ্দ রাখা হয়েছে, যা জাতীয় বাজেটের প্রায় ১৪.৭৮% এবং জিডিপির ১.৮৭% হিসেবে বিনিয়োগের গুরুত্ব নির্দেশ করে
। এর মধ্যে সরাসরি দরিদ্র জনগণের জন্য আলাদা করে Tk ৩৭,০৭৬ কোটি রাখা হয়েছে, যা প্রায় ৭ কোটি ৬৮ লাখ মানুষকে সময়োপযোগী ও টার্গেটেড সহায়তা প্রদানে ব্যয় হবে
। সরাসরি সামাজিক সহায়তার অংশ হিসেবে এই বরাদ্দ বিভিন্ন ভাতা, খাদ্য নিরাপত্তা, নগদ স্থানান্তর ও জরুরি ত্রাণ প্রদানে নিবদ্ধ থাকবে।
খাদ্য নিরাপত্তা কর্মসূচিতে Vulnerable Group Feeding (VGF) ও Open Market Sale (OMS) প্রধান ভুমিকা রাখবে। VGF-এ প্রায় ১.৭৬ কোটি মানুষকে সাশ্রয়ী দামে খাদ্য সামগ্রী প্রদানের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে Tk ১,২২৪ কোটি, যা তাদের অব্যাহত খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে
। OMS-এ প্রায় ১.২৩ কোটি মানুষ স্বল্পমূল্যে চাল ও অন্যান্য পণ্য কিনতে পারবে, যার জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে Tk ৩,৪৩৩ কোটি; এটি পূর্বের বরাদ্দ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে বিশেষ ভূমিকা রাখবে জীবিকা সংকটে থাকা পরিবারগুলোর জন্য
সরকার ডিজিটাল পদ্ধতিতে সামাজিক সহায়তা বিতরণ জোরদার করছে। Dynamic Social Registry (DSR) চালু করে প্রকৃত দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিতদের তথ্যভিত্তিক শনাক্তকরণ নিশ্চিত করা হচ্ছে, যাতে ভুয়া ও পুনরাবৃত্তি সুবিধাভোগীদের বাদ দিয়ে বরাদ্দ সঠিকভাবে পৌঁছে যায়
। পাশাপাশি, G2P (Government-to-Person) ভিত্তিক ডিজিটাল নগদ স্থানান্তর বাড়ানো হচ্ছে; এক্ষেত্রে এককালীন নগদ অনুদান বরাদ্দের শতকরা অংশ বৃদ্ধি পেয়ে ১৯.২৪% থেকে ২০% অতিক্রমের পথে, এবং স্টাইপেন্ডের অনুপাত সামান্য হ্রাস পাচ্ছে, যা নগদ প্রেরণ প্রক্রিয়াকে আরও কর্মক্ষম করে তুলবে
।
ডিজিটাল উপায়ে অর্থ প্রেরণে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস, ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার ও জাতীয় পেমেন্ট সুইচের ব্যবহার বাড়লে প্রশাসনিক ব্যয় কমে যাবে ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত হবে, যা দুর্নীতি প্রতিরোধে সহায়ক হবে
। খাদ্য সহায়তা পুরোপুরি নগদে রূপান্তর নয়, তবে নগদ বিকল্প বাড়ানোর প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে; এতে জরুরি চাহিদা মেটাতে আরও দ্রুত সহায়তা পৌঁছে যাবে, যদিও খাদ্য বিতরণ কর্মসূচিও অগ্রাধিকার থেকে পিছিয়ে যায় নাই
এই বরাদ্দের চ্যালেঞ্জ কার্যকর বাস্তবায়ন। অতীতে তালিকা হালনাগাদে বিলম্ব, দলীয় প্রভাব, দুর্নীতি ইত্যাদি দরিদ্রদের জন্য সাহায্য নষ্ট করেছে; তাই DSR-কে যথাযথভাবে কার্যকর করা, ইউনিয়ন-ওয়ার্ড পর্যায়ে স্বচ্ছ প্রক্রিয়া গড়ে তোলা এবং স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা বিশেষ জরুরি
। নিয়মিত অডিট, তথ্য-ভিত্তিক পর্যালোচনা ও নাগরিক পর্যবেক্ষণ সামাজিক সহায়তার স্বচ্ছতা বৃদ্ধিতে অবদান রাখবে
দারিদ্র্য বিমোচনের পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদি সাস্যবিলিটি নিশ্চিত করতে বাজেটে কর্মসংস্থান সৃষ্টিমূলক উদ্যোগ, প্রশিক্ষণ ও ক্ষুদ্রঋণ সুবিধার ওপরও গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে বলে বিভিন্ন বিশ্লেষণে উল্লেখ পাওয়া যাচ্ছে
। অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি দরিদ্ররা আত্মনির্ভর হতে সহায়ক হবে। পাশাপাশি, খাদ্য ও ভাতা কর্মসূচির সঙ্গে উদ্যোক্তা প্রবণ প্রকল্প সংযোজন হলে দীর্ঘমেয়াদে দারিদ্র্য হ্রাসে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে
খাদ্যশস্য সংগ্রহ লক্ষ্যমাত্রাও বাড়ানো হয়েছে; FY26-এ আভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক উভয় পন্থায় খাদ্যশস্য আমদানি ও সংগ্রহ বাড়িয়ে Tk ২১,২০০ কোটি বরাদ্দের প্রস্তাব, যা খাদ্য জোগান শৃঙ্খলা রক্ষা করবে
। উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় এটি জরুরি, যাতে দরিদ্ররা বাজারে অপ্রাপ্যতায় না পড়ে।
সরকারের রাজস্ব আদায় লক্ষ্যমাত্রা Tk ৫,৬৪,০০০ কোটি নির্ধারণ করে অর্থনীতি স্থিতিশীল রাখার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে; এর ফলে সামাজিক নিরাপত্তা বাজেটের টেকসই অর্থায়ন সহজ হবে যদি রাজস্ব সংগ্রহ ও বাজেট বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা বজায় থাকে
। বিনিয়োগ, রপ্তানি ও বাণিজ্য সম্প্রসারণ দারিদ্র্য বিমোচনে সহায়ক, তাই বাজেটে এ ক্ষেত্রেও নির্দিষ্ট প্রণোদনা রাখা হয়েছে
।
আন্তর্জাতিক সহায়তায় বিশ্বব্যাংকের অনুদান প্রকল্প DSR জোরদারে সহায়তা করবে; এ প্রকল্প জানতে সহায়তা করবে প্রকৃত দরিদ্রদের সনাক্তকরণ ও তথ্যসংযোগ গড়ে তুলতে, যা সামাজিক সহায়তার পূর্বানুমানযোগ্যতা ও কার্যকারিতা বাড়াবে
। উন্নত তথ্যভাণ্ডার ও সংস্থাগুলোর সমন্বয় সুরক্ষা ব্যবস্থা আরও নিশ্চিত করবে।
বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতিতে খাদ্য ও জ্বালানি ব্যয় বৃদ্ধির চাপ, কর্মসংস্থান সংকট ও মুদ্রাস্ফীতি দরিদ্রদের ওপর অতিরিক্ত বোঝা সৃষ্টি করছে। এই প্রেক্ষাপটে Tk ৩৭,০৭৬ কোটি সরাসরি বরাদ্দ জরুরি সহায়তা হিসেবে কাজ করবে এবং বৃহত্তর Tk ১,১৬,৭৩১ কোটি সামাজিক নিরাপত্তা বাজেট সামগ্রিক কাঠামো মজবুত করবে
। তবে এর সুফল পেতে হলে বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও প্রযুক্তির যথার্থ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
সরকারের এই সামাজিক নিরাপত্তা বাজেটের উদ্যোগ কেবল অর্থ বরাদ্দ নয়, বরং দরিদ্র জনগণের পাশে দাঁড়ানোর সংকল্পের প্রতিফলন। সঠিক পরিকল্পনা ও প্রয়োগের মাধ্যমে এই বরাদ্দ দেশের দারিদ্র্য বিমোচন ও সামাজিক ন্যায় প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে