
ড. মুহাম্মদ ইউনুসের উদ্যোগে বাংলাদেশে শিল্প-উৎপাদনের নতুন সম্ভাবনা; দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সিঞ্চনের প্রত্যাশা
২০২৫ সালের ১ জুন সকাল ১১টায় ঢাকা আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত প্রেস কনফারেন্সে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুস চীনা বিনিয়োগকারীদের কাছে বাংলাদেশের উৎপাদন খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধির আহ্বান জানান। এই গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্যে তিনি দেশের অর্থনৈতিক সম্ভাবনা ও বৈদেশিক বিনিয়োগের গুরুত্ব সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেন।
ড. ইউনুস তাঁর বক্তব্যে উল্লেখ করেন, বাংলাদেশের সুবিধাজনক ভৌগলিক অবস্থান ও যুবসমৃদ্ধ জনসংখ্যা আন্তর্জাতিক মানের উৎপাদনশীলতা অর্জনের জন্য আদর্শ। বাংলাদেশ এখনো শিল্পায়নের ক্ষেত্রে অনেক দূর এগিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রাখে এবং সঠিক পরিকল্পনা ও বিনিয়োগের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতি নতুন উচ্চতায় পৌঁছতে পারে। তিনি বলেন, “চীনা বিনিয়োগ বাংলাদেশকে শুধু একটি উৎপাদন কেন্দ্রেই পরিণত করবে না, বরং এটি আমাদের দেশের কর্মসংস্থান এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতাকে দৃঢ় করবে।”
চীন-বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সম্পর্ক ক্রমশ শক্তিশালী হচ্ছে। বিনিয়োগ ও বাণিজ্য ক্ষেত্রে চীনা সংস্থাগুলো বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়ন এবং শিল্পায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। বিশেষ করে রপ্তানিমুখী শিল্পগুলোতে চীনা পুঁজির আগ্রহ বাংলাদেশের ব্যবসায়িক পরিবেশের জন্য ইতিবাচক ইঙ্গিত বহন করে।
ড. ইউনুস আরও বলেন, বাংলাদেশের চমৎকার শিক্ষিত এবং দক্ষ মানবসম্পদ চীনা প্রযুক্তি ও অভিজ্ঞতার সাথে মিলিত হলে, তা উৎপাদনশীলতার উচ্চতর মান নিশ্চিত করবে। এদিকে, বাংলাদেশ সরকারও বৈদেশিক বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে একাধিক প্রণোদনা ও সুবিধা প্রদান করছে। বিনিয়োগকারীদের জন্য কর ছাড়, বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (ইপিজেড) স্থাপন, সহজ ব্যবসার পরিবেশ ও স্থিতিশীল নীতি গ্রহণ ইত্যাদি বাংলাদেশকে বিনিয়োগের অনুকূল গন্তব্য হিসেবে গড়ে তুলেছে।
বর্তমানে, গার্মেন্টস, টেক্সটাইল, চামড়া, ইলেকট্রনিক্সসহ বিভিন্ন খাতে বাংলাদেশ চীনের পুঁজির জন্য আকর্ষণীয় ক্ষেত্র হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। বিশেষ করে বৈশ্বিক বাজারে চীনের সাথে যৌথ উদ্যোগে উৎপাদন সম্প্রসারণে দেশটির গুরুত্ব বাড়ছে। বাংলাদেশের শ্রমিকদের দক্ষতা, প্রতিযোগিতামূলক মজুরি এবং সরকারী সহায়তা প্রতিষ্ঠানগুলোকে এখানে বিনিয়োগের জন্য অনুপ্রাণিত করছে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বাংলাদেশ এখনো অনেকটা অব্যবহৃত সম্ভাবনা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। দেশের উৎপাদন খাতকে বহুগুণ বৃদ্ধি করতে হলে বৈদেশিক সরাসরি বিনিয়োগের (এফডিআই) প্রবাহ অব্যাহত রাখতে হবে এবং নতুন নতুন সেক্টরে বিনিয়োগ করতে হবে। বিশেষ করে প্রযুক্তি নির্ভর শিল্প, পরিবহন ও লজিস্টিকস, জ্বালানি ও শক্তি খাতসহ বহুমুখী শিল্পায়ন প্রয়োজন।
বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হলো, বিশ্ব বাজারে প্রতিযোগিতার সুযোগ লাভের জন্য পরিবেশবান্ধব এবং টেকসই উৎপাদনের দিকে নজর দেওয়া। এই বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে চীনা বিনিয়োগকারীদেরও আগ্রহী হতে হবে। বাংলাদেশের পরিবেশ রক্ষায় সরকার ইতিমধ্যেই নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করেছে যা দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের জন্য স্থিতিশীল পরিবেশ নিশ্চিত করবে।
এছাড়াও, বাংলাদেশ সরকার চীনের সঙ্গে কৌশলগত অংশীদারিত্ব বৃদ্ধির মাধ্যমে বাণিজ্যিক ও শিল্পিক সহযোগিতা জোরদার করতে চায়। বিশেষ করে ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ উদ্যোগের আওতায় দুই দেশের সম্পর্ক আরও গভীর হচ্ছে, যা বাংলাদেশের উৎপাদন শিল্পের জন্য নতুন সুযোগ এনে দিচ্ছে।
সর্বোপরি, বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক উৎপাদন কেন্দ্রে পরিণত করার ক্ষেত্রে চীনা বিনিয়োগের গুরুত্ব অপরিসীম। দেশটির অভিজ্ঞতা ও প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বাংলাদেশের কাঁচামালের প্রক্রিয়াকরণ, প্রস্তুত পণ্যের উৎপাদন ও রপ্তানি ক্ষেত্রে বহুমাত্রিক উন্নয়ন আনতে পারে।
বাংলাদেশের উন্নয়নে এই যৌথ প্রচেষ্টা শুধু অর্থনৈতিক লাভবান করবে না, বরং দুই দেশের মধ্যকার সাংস্কৃতিক ও কূটনৈতিক সম্পর্ককেও আরও সুদৃঢ় করবে। ড. মুহাম্মদ ইউনুসের আহ্বান বাংলাদেশের ভবিষ্যত শিল্পায়ন এবং বৈদেশিক বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে বলে আশা করা হচ্ছে।