
আজ সকাল ১০টা থেকে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলামের নেতৃত্বে ছাত্রদলের বিভিন্ন শাখা ইউনিটের নেতাকর্মীরা শাহবাগ মোড়ে জড়ো হয়ে অবস্থান নিতে শুরু করেন। এর কিছুক্ষণ আগে, সকাল সাড়ে ৯টা থেকেই নেতাকর্মীরা রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসে জমায়েত হতে থাকেন। কর্মসূচির কারণে এক পর্যায়ে শাহবাগ মোড়ে যান চলাচল সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে পড়ে। এতে করে জনসাধারণ, অফিসগামী মানুষ এবং শিক্ষার্থীরা ব্যাপক দুর্ভোগে পড়েন। ঢাকা শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত এই মোড়টি রাজধানীর অন্যতম ব্যস্ত সড়ক হিসেবে পরিচিত, যা ঢাকা মেডিকেল কলেজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলা একাডেমি ও জাতীয় জাদুঘরের সংযোগস্থল।
শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির ঘোষণা, তবে ক্ষোভে ফুঁসছে নেতাকর্মীরা
ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা জানান, তারা শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন করছেন। তবে দীর্ঘদিন পেরিয়ে গেলেও শাহরিয়ার সাম্য হত্যাকাণ্ডে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি না থাকায় তারা ক্ষুব্ধ। তারা প্রশাসনের বিরুদ্ধে বিচারপ্রক্রিয়া বিলম্বিত করার অভিযোগ তুলেছেন।
ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম বলেন, “আমরা বারবার বলেছি, এই হত্যাকাণ্ড পূর্বপরিকল্পিত। সাম্য ছিল একজন মেধাবী ছাত্র এবং সাহসী সংগঠক। অথচ প্রশাসন আমাদের সঙ্গে লুকোচুরি খেলছে। এখনও পর্যন্ত কোনো সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না। এটি অত্যন্ত দুঃখজনক।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা বিচার চাই, প্রতিশ্রুতি নয়। যদি দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ না করা হয়, তাহলে আমরা কঠোর কর্মসূচির দিকে যেতে বাধ্য হবো। আজকের অবস্থান কর্মসূচি হচ্ছে একটি প্রতীকী প্রতিবাদ। সাম্য হত্যার বিচার না হওয়া পর্যন্ত আমরা রাজপথ ছাড়বো না।”
কে ছিলেন শাহরিয়ার আলম সাম্য?
শাহরিয়ার আলম সাম্য ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। তিনি স্যার এ এফ রহমান হল শাখা ছাত্রদলের সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন। গত ১৩ মে রাতে বাংলা একাডেমির পাশে ছুরিকাঘাতে তিনি গুরুতর আহত হন। পরে তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন।
ঘটনার পরপরই পুলিশ তিনজনকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছে। তবে ছাত্রদলের দাবি, এই হত্যাকাণ্ডে আরও ব্যক্তি জড়িত রয়েছে, এবং তারা মনে করেন তদন্তকে সীমিত করে অপরাধীদের আড়াল করা হচ্ছে।
বিচারহীনতার সংস্কৃতির অভিযোগ
ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির একাধিক নেতা অভিযোগ করেন, দেশে বিচারহীনতার একটি সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে, যেখানে রাজনৈতিক কর্মীদের হত্যার পর বিচার প্রক্রিয়া দীর্ঘসূত্রতায় পড়ে যায় কিংবা রাজনীতিক প্রভাবে তদন্তে হস্তক্ষেপ হয়। তারা আশঙ্কা করছেন, সাম্য হত্যার ক্ষেত্রেও একই পরিস্থিতি হতে পারে।
ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক মো. হোসেন আলী বলেন, “আমরা দেখেছি আগেও অনেক রাজনৈতিক কর্মী হত্যার বিচার হয়নি বা বছরের পর বছর ধরে ঝুলে আছে। প্রশাসন যদি এখনই পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে এটিও হয়তো সেই তালিকায় যুক্ত হবে। আমরা তা হতে দেবো না।”
পুলিশের অবস্থান ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা
এদিকে, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের রমনা বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, শাহবাগ মোড় এবং তার আশপাশে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। যাতে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে, সেজন্য তারা সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন।
তিনি বলেন, “ছাত্রদল তাদের কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে পালন করছে। আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি এবং জননিরাপত্তা রক্ষায় সব ধরনের প্রস্তুতি আমাদের রয়েছে।”
তবে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষের ভোগান্তি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “সবার নিরাপত্তা ও মতপ্রকাশের অধিকার রক্ষা করেই আমরা ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করছি। প্রয়োজন অনুযায়ী বিকল্প রুট ব্যবহারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”
ভবিষ্যৎ কর্মসূচির হুমকি
ছাত্রদলের নেতারা জানিয়েছেন, যদি তাদের দাবি বাস্তবায়নের কোনো আশ্বাস না দেওয়া হয়, তাহলে তারা ভবিষ্যতে ঢাকাসহ সারা দেশে ব্যাপক কর্মসূচির ডাক দেবেন। তারা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ, মানববন্ধন এবং ধর্মঘট আয়োজনের পরিকল্পনার কথাও জানান।
ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক সাকিব আহমেদ বলেন, “এটা শুধু সাম্যর জন্য নয়, এটা আমাদের সবার নিরাপত্তা, অধিকার ও ন্যায়ের প্রশ্ন। সাম্য ছিল আমাদের সহযোদ্ধা। তার রক্ত আমরা বৃথা যেতে দেবো না।”
সামাজিক মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া
সাম্য হত্যাকাণ্ড এবং ছাত্রদলের আন্দোলন সামাজিক মাধ্যমেও ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে। অনেকেই এই হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানিয়ে বিচার দাবি করেছেন। ছাত্রদলের সমর্থকেরা সামাজিক মাধ্যমে #JusticeForSamya হ্যাশট্যাগে প্রতিবাদ জানিয়ে যাচ্ছেন।
উপসংহার
শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যাকাণ্ড ছাত্ররাজনীতির জগতে নতুন করে এক শোকের ছায়া ফেলেছে। এ হত্যাকাণ্ড শুধু একজন শিক্ষার্থীর মৃত্যু নয়, বরং এটি শিক্ষাঙ্গনে নিরাপত্তার প্রশ্ন, বিচারব্যবস্থার স্বচ্ছতা এবং রাজনৈতিক প্রতিহিংসার একটি প্রতিচ্ছবি। ছাত্রদলের আন্দোলন তাই শুধু সাম্যর জন্য নয়, ভবিষ্যতের যেকোনো সম্ভাব্য রাজনৈতিক সহিংসতা প্রতিরোধের জন্যও একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করছে। এখন দেখার বিষয়, প্রশাসন কত দ্রুত এবং কীভাবে এই হত্যাকাণ্ডের বিচার নিশ্চিত করে জনআস্থার প্রতিফলন ঘটায়।