
চট্টগ্রামের আলোচিত জুলাই হত্যাকাণ্ডে জড়িত অভিযোগে আদালতের নির্দেশে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে তামান্না শরমিনকে; ভাইরাল ভিডিওতে হুমকির অভিযোগ
চট্টগ্রামের কুখ্যাত অপরাধী সজ্জাদ হোসেন ওরফে ছোট সাজ্জাদের স্ত্রী তামান্না শরমিনকে পাঁচটি হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। ২০২৫ সালের ২ জুন চট্টগ্রামের চতুর্থ মহানগর ম্যাজিস্ট্রেট মো. মোস্তফা এই আদেশ দেন, যা চান্দগাঁও থানার পক্ষ থেকে পৃথকভাবে দাখিল করা আবেদনের ভিত্তিতে দেওয়া হয়।
তামান্নার বিরুদ্ধে যেসব হত্যা মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে, সেগুলো ২০২৪ সালের জুলাই মাসে ঘটে যাওয়া পাঁচটি হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। নিহতরা হলেন—বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হৃদয় চন্দ্র তরুয়া, সেলসম্যান শহিদুল ইসলাম, তানভীর সিদ্দিকী, সাইমন মাহিন এবং ফজলে রাব্বি।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) অ্যাডিশনাল ডেপুটি কমিশনার (প্রসিকিউশন) মফিজ উদ্দিন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, তদন্ত কর্মকর্তার পক্ষ থেকে পাঁচটি মামলার প্রতিটির জন্য পৃথকভাবে আবেদন করা হয় এবং আদালত সব আবেদন গ্রহণ করে তামান্নাকে গ্রেপ্তার দেখানোর নির্দেশ দেয়।
এর আগেই ২০২৫ সালের ১১ মে তামান্নাকে বিশেষ ক্ষমতা আইনে আটক করা হয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ তার বিরুদ্ধে ৩০ দিনের আটকাদেশ দেয়, যার ভিত্তিতে তিনি এখন পুলিশ হেফাজতে রয়েছেন।
ছোট সাজ্জাদের পটভূমি:
ছোট সাজ্জাদ নামে পরিচিত সজ্জাদ হোসেন চট্টগ্রামের অপরাধ জগতের পরিচিত মুখ। তার বিরুদ্ধে অন্তত ১৫টি মামলা রয়েছে—যার মধ্যে রয়েছে খুন, চাঁদাবাজি ও অস্ত্র আইনের অভিযোগ। ২০২৫ সালের ১৫ মার্চ ঢাকার বসুন্ধরা শপিং মলের আশপাশে ঘোরাঘুরির সময় তেজগাঁও থানা পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। তবে তখন তার স্ত্রী তামান্না পালিয়ে যেতে সক্ষম হন।
সাজ্জাদ গ্রেপ্তারের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি ভিডিও ভাইরাল হয় যেখানে তামান্না বলেন, “টাকার বান্ডিল ছিটিয়ে হলেও আমি আমার স্বামীকে বের করব।” ভিডিওতে তিনি আরও বলেন, সাজ্জাদ ১০-১২ দিনের মধ্যে জামিনে বেরিয়ে আসবে এবং যারা তাকে গ্রেপ্তার করেছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আগের ঘটনা:
২০২৪ সালের ৪ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের অক্সিজেন মোড় এলাকায় পুলিশের অভিযানের সময় ছোট সাজ্জাদ গুলি চালিয়ে পালিয়ে যায়। এতে চারজন আহত হন, যার মধ্যে দুইজন পুলিশ সদস্যও ছিলেন। এরপর থেকেই তার বিরুদ্ধে অভিযান জোরদার করা হয় এবং শেষ পর্যন্ত ২০২৫ সালের মার্চে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
আইনি অগ্রগতি:
তামান্নার বিরুদ্ধে এখন পাঁচটি হত্যা মামলায় আনুষ্ঠানিকভাবে আইনি কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। চট্টগ্রামের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ছোট সাজ্জাদ ও তার অপরাধচক্রের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে এবং এই চক্রের মূল কুশীলবদের আইনের আওতায় আনতে পদক্ষেপ গ্রহণ করছে।
জনসাধারণের প্রতিক্রিয়া:
তামান্নার হুমকির ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। অনেকেই উদ্বেগ প্রকাশ করে বলছেন, টাকার জোরে বিচার ব্যবস্থাকে প্রভাবিত করার চেষ্টা যেন না হয়। অনেকে প্রশাসনের প্রতি আস্থা প্রকাশ করে বলছেন, কঠোর পদক্ষেপের মাধ্যমে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে।