
এই পুনর্গঠন অনুযায়ী, নতুন করে গঠিত ৪৯টি বেঞ্চের মধ্যে ২৮টি দ্বৈত বেঞ্চ (দুইজন বিচারপতির সমন্বয়ে গঠিত) এবং ২১টি একক বেঞ্চ থাকবে। সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ তথ্য জানায়। ছুটির পর আগামী রবিবার (২৩ জুন ২০২৫) সকাল ১০:৩০টায় হাইকোর্টে নিয়মিত বিচার কার্যক্রম শুরু হবে, এবং এই নতুন বেঞ্চ কাঠামো তখন থেকেই কার্যকর হবে।
প্রধান বিচারপতির এই পুনর্গঠনের সিদ্ধান্তের পেছনে রয়েছে বিচার কার্যক্রমে গতি আনা, দীর্ঘসূত্রতা কমানো এবং বেঞ্চসমূহের মধ্যে মামলার ভারসাম্যপূর্ণ বণ্টন নিশ্চিত করার লক্ষ্য। বর্তমানে দেশের বিচার বিভাগে লক্ষাধিক মামলা ঝুলে আছে। অনেক বিচারপ্রার্থী বছরের পর বছর ধরে মামলার শুনানির অপেক্ষায় থাকেন। এই নতুন কাঠামো এসব সমস্যা মোকাবিলায় সহায়ক হতে পারে।
বিচারিক কাঠামোতে কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন
সাধারণত দ্বৈত বেঞ্চগুলো বেশি গুরুত্বপূর্ণ মামলা যেমন—সংবিধানিক ব্যাখ্যা, রিট পিটিশন, ফৌজদারি আপিল ও দেওয়ানি বিষয় শুনানির জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত থাকে। অন্যদিকে, একক বেঞ্চগুলো জামিন আবেদন, রিভিশন, ট্রেড মার্ক, কোম্পানি ও অন্যান্য নির্ধারিত আইনগত বিষয়ে শুনানি করে থাকে। তাই বেঞ্চ পুনর্গঠন মানেই কার্যকারিতার দিক থেকে নতুন দিগন্তের সূচনা।
সুপ্রিম কোর্টের মুখপাত্র মো. মুয়াজ্জেম হোসেন গণমাধ্যমকে জানান, এই বেঞ্চ পুনর্গঠন একটি রুটিন প্রশাসনিক কার্যক্রম হলেও, এটি বিচার বিভাগের স্বচ্ছতা ও দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, “প্রতি বছর ছুটি শেষে আমরা বিচারিক কাজ সুষ্ঠুভাবে চালাতে বেঞ্চ পুনর্গঠন করে থাকি। এতে করে বিচারপতিদের কাজের ক্ষেত্র নির্দিষ্ট হয় এবং মামলার দ্রুত নিষ্পত্তির সম্ভাবনা বাড়ে।”
আপিল বিভাগেও পরিবর্তন
শুধু হাইকোর্ট বিভাগেই নয়, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগেও দুটি পৃথক বেঞ্চ কাজ করবে বলে জানা গেছে। বিচারপতি মো. রেজাউল হক সুপ্রিম কোর্টের চেম্বার বেঞ্চের দায়িত্বে থাকবেন। এই চেম্বার বেঞ্চ ছুটির দিনেও জরুরি শুনানির জন্য কার্যকর ভূমিকা পালন করে থাকে, যেখানে অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ ও আপিল আবেদনের উপর শুনানি হয়।
আইনজীবী ও বিচার বিভাগের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মতে, এই পুনর্গঠনটি সময়োপযোগী এবং বর্তমান চাহিদার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। তারা বলেন, বেঞ্চ পুনর্গঠনের ফলে বিচারকদের কাজের ক্ষেত্র নির্ধারিত হওয়ায় মামলার শুনানিতে নিয়মিততা আসে, যা বিচারপ্রার্থীদের জন্য স্বস্তিকর।
আইনজীবীদের প্রতিক্রিয়া
ঢাকা বার অ্যাসোসিয়েশন ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সদস্যরা প্রধান বিচারপতির এই সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। তাদের মতে, প্রক্রিয়াগত দিক থেকে এটি একটি প্রশংসনীয় পদক্ষেপ। অনেক আইনজীবী মনে করেন, যদি এই পরিকল্পনাগুলো কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করা যায়, তবে মামলার জট উল্লেখযোগ্যভাবে কমবে এবং বিচারপ্রার্থীরা দ্রুত বিচার লাভ করবেন।
স্বচ্ছতা ও ডিজিটাল ব্যবস্থাপনা
এই পুনর্গঠন প্রক্রিয়া বিচার বিভাগের স্বচ্ছতা বৃদ্ধির জন্য একটি দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ। অতীতে কখনো কখনো বেঞ্চ বণ্টনে পক্ষপাতের অভিযোগ উঠেছে, তবে এবার প্রধান বিচারপতি প্রকাশ্যে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে তালিকা প্রকাশ করেছেন। এতে করে বেঞ্চ কার্যক্রমের প্রতি আস্থা বৃদ্ধি পাবে।
বর্তমানে সুপ্রিম কোর্ট ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে মামলার তালিকা, শুনানির তারিখ, আদেশ ও রায় প্রকাশ করে থাকে। এই পুনর্গঠনের ফলে এসব তথ্য ব্যবস্থাপনাও সহজ হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনা
এই পুনর্গঠন স্থায়ী নয়—এটি সময় ও প্রয়োজনে পরিবর্তনযোগ্য। বিচারপতির সংখ্যা, মামলার ধরন, ও বিচার বিভাগের চাহিদা অনুযায়ী বেঞ্চ পুনর্গঠন করা হয়। তবে এবার প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে যেভাবে বিষয়টি সুশৃঙ্খলভাবে সম্পন্ন হয়েছে, তা ভবিষ্যতের জন্য একটি ইতিবাচক দৃষ্টান্ত তৈরি করবে।
পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, এই ধরণের কাঠামোগত পরিবর্তন কেবল মামলার সংখ্যাগত ব্যবস্থাপনায় নয়, বরং মানসম্মত বিচার কার্যক্রম নিশ্চিত করতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বিচারপ্রার্থীদের জন্য এটি একটি আশার আলো।
উপসংহার
হাইকোর্ট বিভাগের ৪৯টি বেঞ্চ পুনর্গঠন করে প্রধান বিচারপতি যে পদক্ষেপ নিয়েছেন, তা বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থায় একটি সময়োপযোগী, সুনির্দিষ্ট ও কৌশলগত পদক্ষেপ। আগামী রবিবার থেকে এই নতুন কাঠামোর আওতায় বিচার কার্যক্রম শুরু হলে এর কার্যকারিতা সম্পর্কে আরও সুস্পষ্ট ধারণা পাওয়া যাবে। তবে আপাতদৃষ্টিতে এই সিদ্ধান্ত বিচার বিভাগের গতি ফেরাতে ও বিচারপ্রার্থীদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করা হচ্ছে।