
ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যে ঈদের নামাজ, ত্যাগের মহিমায় কোরবানি ও উন্নত বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় নজির গড়ল বাংলাদেশ
ঢাকা, ৭ জুন ২০২৫ – বাংলাদেশজুড়ে আজ (শনিবার) মুসলিম সম্প্রদায় পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপন করেছে আনন্দ, উৎসব ও ত্যাগের মহিমায়। সকাল থেকে শুরু হওয়া ঈদের নামাজ, কোরবানি এবং মাংস বিতরণ—সব মিলিয়ে দেশের প্রতিটি অঞ্চলেই ছিল উৎসবের আমেজ।
ঈদের নামাজের মাধ্যমে দিনের সূচনা
ভোর থেকেই রাজধানীসহ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে মুসল্লিরা ঈদের নামাজ আদায় করার জন্য বিভিন্ন মসজিদ ও ঈদগাহে জমায়েত হন। ঢাকায় প্রধান ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয় জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে, যেখানে হাজারো মানুষ অংশ নেন।
সাদা পাঞ্জাবি, টুপি ও আতরের ঘ্রাণে মাখামাখি ঈদগাহে ঈদের আবহ ছিল অত্যন্ত শান্তিপূর্ণ। অন্যান্য বড় শহর যেমন চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, সিলেটেও হয়েছে বিশাল জামাত। খুতবার পর ইমামরা ত্যাগ ও মানবিকতার গুরুত্ব তুলে ধরেন।
ত্যাগের মাধ্যমে ঈদের মূল বার্তা
নামাজের পরপরই শুরু হয় কোরবানির আনুষ্ঠানিকতা। মুসলমানরা ইসলামের অন্যতম এই রীতি পালন করতে গরু, ছাগল, উট প্রভৃতি পশু কোরবানি দেন, যা প্রমাণ করে আল্লাহর প্রতি অবিচল আনুগত্য।
ঢাকা ও চট্টগ্রামের মতো শহরে অনেকে সামাজিকভাবে কোরবানি করেন, যেখানে একটি এলাকায় অনেক পরিবার মিলে কোরবানি দিয়ে মাংস ভাগ করে নেয়। কোরবানির পর মাংস তিনভাগে ভাগ করে—একভাগ নিজের জন্য, একভাগ আত্মীয়-স্বজনদের জন্য এবং একভাগ গরীবদের মধ্যে বিতরণ করা হয়।
পরিচ্ছন্নতা ব্যবস্থাপনায় নতুন মাইলফলক
প্রতিবছর ঈদুল আজহার সময় পশুর বর্জ্য শহরের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। তবে ২০২৫ সালে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এ বিষয়ে বিশেষ প্রস্তুতি নেয়।
হাজার হাজার পরিচ্ছন্নতা কর্মী ও বিশেষ গাড়ি নিয়োজিত হয়। অনেক এলাকাতেই দুপুরের মধ্যেই বর্জ্য অপসারণ সম্পন্ন হয়। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, রাত ১২টার মধ্যে পুরো শহর পরিষ্কার করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
এছাড়া, অনলাইন অ্যাপ ও হটলাইন নম্বরের মাধ্যমে নাগরিকরা দ্রুত পরিষেবা পেতে পারছেন, যা অনেকের কাছেই প্রশংসিত হয়েছে।
সারাদেশে ঈদের আনন্দ
মহামারির পর অর্থনৈতিক সংকট ও নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি থাকা সত্ত্বেও মানুষ ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিয়েছে। গ্রামের মানুষ একত্র হয়ে কোরবানির মাংস রান্না করে খেয়েছেন, ছোটরা খেলাধুলায় মেতে উঠেছে।
পরিবার-পরিজনের সাথে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়ের পাশাপাশি অনেকে ভিডিও কলে প্রবাসী স্বজনদের সাথে যোগাযোগ করেছেন। টেলিভিশনে ঈদের বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার হয়েছে এবং সামাজিক মাধ্যমে ঈদের ছবি ও শুভেচ্ছায় মুখর ছিল দিনটি।
শান্তিপূর্ণভাবে উদযাপিত ঈদ
আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বাংলাদেশ পুলিশ ও অন্যান্য বাহিনী ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়। বড় বড় ঈদগাহ, পশুর হাট ও জনসমাগমস্থলে ছিল অতিরিক্ত নজরদারি। সারাদিন শান্তিপূর্ণভাবে উদযাপন হয়েছে, কোনো বড় ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
রাজধানী ঢাকায় যানজট ছিল অনেকটাই কম, কারণ অনেকেই ঈদের আগে নিজ নিজ গ্রামের বাড়িতে চলে গেছেন। আন্তঃজেলা ট্রেন ও বাস চলাচল ছিল ঈদের আগে পূর্ণদমে।
ঈদুল আজহার শিক্ষা: ত্যাগ, ধৈর্য ও মানবতা
ঈদুল আজহা কেবল একটি উৎসব নয়, এটি আত্মত্যাগ, ধৈর্য ও মানবিকতার শিক্ষার প্রতীক। এই দিনে মুসলমানরা তাদের ভেতরের অহংকার, হিংসা ও আত্মকেন্দ্রিকতা ত্যাগ করে আল্লাহর পথে নিজেকে সঁপে দেওয়ার শিক্ষা গ্রহণ করেন।
দেশজুড়ে বিভিন্ন ধর্মীয় নেতা ঈদের খুতবার মাধ্যমে মানুষের মধ্যে সহানুভূতি, দান, সমাজসেবার গুরুত্ব তুলে ধরেন। অনেক এনজিও ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন গরিব ও এতিমদের মাঝে কোরবানির মাংস বিতরণ করে ঈদের আনন্দে তাদের শরিক করেছেন।
ভবিষ্যতের জন্য একটি দৃষ্টান্ত
২০২৫ সালের বাংলাদেশে ঈদুল আজহার সফল আয়োজন নাগরিক ও প্রশাসনের সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফল। পরিচ্ছন্নতা, নিরাপত্তা ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে উদযাপনটি অন্য বছরের তুলনায় অনেক বেশি সুচারুভাবে সম্পন্ন হয়েছে।
দেশের মানুষ আজকের দিনে মহান স্রষ্টার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন এবং ভবিষ্যতে এমন উৎসবগুলো যাতে আরো সুন্দরভাবে উদযাপন করা যায়, সে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।