
স্বস্তিতে শুরু, বিকেলে বাড়ে দুর্ভোগ
ঢাকা, ৫ জুন ২০২৫ — ঈদুল আজহার দীর্ঘ ১০ দিনের ছুটি শুরু হওয়ায় আজ থেকেই রাজধানী ঢাকা ছেড়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছুটছেন লাখো মানুষ। ট্রেন, বাস ও লঞ্চে যাত্রার মাধ্যমে প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে মানুষ ফিরছেন গ্রামে। শুরুটা স্বস্তিদায়ক হলেও বিকেলের পর থেকেই যানবাহনের সংকট, অতিরিক্ত ভাড়া ও টিকিট জালিয়াতির মতো সমস্যায় পড়েছেন অনেক যাত্রী।
সকাল থেকে কমলাপুর রেল স্টেশন থেকে নির্ধারিত সময়েই ট্রেন ছেড়েছে। যাত্রীদের মতে, ডিজিটাল টিকিট ব্যবস্থা ও সময়সূচি ঠিক থাকায় প্রথম ভাগের ট্রেনযাত্রা ছিলো তুলনামূলকভাবে স্বস্তিদায়ক। এক যাত্রী বলেন, “এবার সময়মতো ট্রেন পেয়েছি, আগে এতটা গুছানো ছিল না।”
সড়কপথেও প্রথমদিকে ট্রাফিক ছিল তুলনামূলকভাবে নিয়ন্ত্রিত। তবে সাভার–বাইপাইল–চন্দ্রা সেকশনে যানজটের খবর পাওয়া গেছে। পুলিশ ও হাইওয়ে টহল দল সক্রিয় রয়েছে যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে।
বিকেলের পরই দুর্ভোগ: যানবাহনের সংকট ও ভাড়া বৃদ্ধি
বিকেল ৪টার পর থেকেই গাবতলী, মহাখালী ও সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে যাত্রীদের ভিড় বাড়তে থাকে। অনেকেই অভিযোগ করেন, নির্ধারিত বাস সময়মতো না আসায় এবং অতিরিক্ত যাত্রী চাপের কারণে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা।
সবচেয়ে বেশি অভিযোগ আসে ভাড়া বৃদ্ধির বিষয়ে। সাধারণত ৪০০ টাকার বাস টিকিট বিক্রি হচ্ছে ৭০০-৮০০ টাকায়। এসি বাসের ভাড়া পেরিয়ে গেছে ১২০০ টাকা। রংপুরগামী এক যাত্রী বলেন, “প্রতিবারের মতো এবারও অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হচ্ছে। সরকারি কোনো নিয়ন্ত্রণ কার্যকর মনে হচ্ছে না।”
টিকিট জালিয়াতির ফাঁদে যাত্রীরা
বাস কাউন্টার ঘিরে দালালদের সক্রিয়তা ছিল লক্ষণীয়। অনেক যাত্রী জাল বা পুনঃব্যবহৃত টিকিট কিনে প্রতারিত হয়েছেন। টিকিট যাচাই করার পর তারা বুঝতে পারেন তাদের টিকিট বৈধ নয়। একাধিক যাত্রী এ ধরনের অভিযোগ করেছেন।
বিআরটিএর অভিযান: জরিমানা ও সতর্কতা
অভিযোগের ভিত্তিতে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে গাবতলী ও মহাখালীতে অভিযান চালায়। অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের দায়ে কয়েকটি পরিবহন কোম্পানিকে জরিমানা করা হয়। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, যাত্রী হয়রানি বন্ধে নিয়মিত তদারকি চলবে।
পরিবহন মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, “জনগণের নির্বিঘ্ন যাত্রা নিশ্চিত করতে সরকার সক্রিয়। যারা অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বা টিকিট জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
গার্মেন্টস বন্ধ হলে আরও বাড়বে চাপ
বিজিএমইএ জানায়, দেশের বিভিন্ন পোশাক কারখানা ৪ জুন থেকে বন্ধ হতে শুরু করেছে এবং আগামী দুই-তিন দিনের মধ্যে সব কারখানা বন্ধ হয়ে যাবে। এতে ঈদযাত্রার চাপ আরও বেড়ে যাবে বলে আশঙ্কা করছে পরিবহন কর্তৃপক্ষ।
ঢাকা–ময়মনসিংহ, ঢাকা–চট্টগ্রাম ও ঢাকা–টাঙ্গাইল মহাসড়কে যানবাহনের চাপ বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। পরিবহন মালিকরা জানিয়েছেন, অতিরিক্ত বাস প্রস্তুত রাখা হয়েছে, কিন্তু যাত্রীর চাপে তা যথেষ্ট না-ও হতে পারে।
রেল ও লঞ্চ ঘাটে প্রস্তুতি
বাংলাদেশ রেলওয়ে ঈদ উপলক্ষে অতিরিক্ত ট্রেন চালু করেছে। কমলাপুর রেল স্টেশনে বাড়তি নিরাপত্তা ও টিকিট যাচাইয়ের জন্য বাড়তি কর্মী মোতায়েন করা হয়েছে। যাত্রীদের অনুরোধ করা হয়েছে শুধু নির্ধারিত প্ল্যাটফর্ম থেকেই ট্রেনে উঠতে।
এদিকে সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালেও যাত্রীদের ভিড় বেড়েছে। দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীরা বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালীসহ বিভিন্ন জেলায় ফিরছেন। লঞ্চ মালিকরা জানিয়েছেন, রাতেও অতিরিক্ত লঞ্চ চালু রাখা হবে।
যাত্রীদের অভিমত: আনন্দের সঙ্গে কিছু হতাশাও
বাড়ি ফেরার যাত্রায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে যাত্রীদের কাছ থেকে। এক বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী বলেন, “বরিশাল যাচ্ছি বাবা-মায়ের সঙ্গে ঈদ করতে। কষ্ট হলেও এটা বছরের সেরা সময়।” অপরদিকে অনেকে বলছেন, অতিরিক্ত ভাড়া ও দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকা তাদের ঈদ আনন্দে ছাপ ফেলেছে।
একজন যাত্রী বলেন, “বাচ্চা নিয়ে চার ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেছি, তারপরও টিকিট পাইনি। অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে যেতে হচ্ছে।”
সতর্কতা ও পরামর্শ
আগামী কয়েকদিন যাত্রার চাপ আরও বাড়বে বলে জানিয়েছে প্রশাসন। যাত্রীদের উদ্দেশ্যে দেওয়া হয়েছে কিছু পরামর্শ:
-
টিকিট কিনুন অফিসিয়াল কাউন্টার বা অনলাইন প্ল্যাটফর্ম থেকে।
-
অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ জানাতে বিআরটিএ হেল্পলাইন ব্যবহার করুন।
-
ভিড়ের সময় এড়িয়ে ভোর বা দুপুরে যাত্রা করার চেষ্টা করুন।
-
রেল স্টেশনে সময়মতো পৌঁছান এবং টিকিট যাচাই করুন।