
“Operation Rising Lion” নামে আক্রমণে পারমাণবিক স্থাপনা ও উচ্চপদস্থ কমান্ডারদের লক্ষ্য, মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা ও বৈশ্বিক নিরাপত্তা উদ্বেগ বৃদ্ধি
ইসরায়েল ১৩ জুন ভোরে ইরানের বিভিন্ন পারমাণবিক স্থাপনা ও সামরিক কমান্ডারদের বিরুদ্ধে ব্যাপক আকারের হামলা চালায়, যা “Operation Rising Lion” নামেও খ্যাত হয়েছে; ইসরায়েলি সরকার দাবি করেছে যে এই হামলার মাধ্যমে ইরানের পারমাণবিক সক্ষমতা ভয়াল পর্যায়ে পৌঁছানোর আগেই রোধ করতে চাওয়া হয়েছে, কারণ তারা আশঙ্কা করে যে ইরান খুব শীঘ্রই পারমাণবিক যুদ্ধোপকরণ নিয়ে বসতে পারে
। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে উল্লেখ হয়েছে যে হামলার লক্ষ্যস্থলগুলির মধ্যে ছিল নাতানজ পারমাণবিক সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র, ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন কারখানা ও IRGC-এর উচ্চপদস্থ সদর দপ্তর; ইসরায়েলি বিমানবাহিনী প্রচুর যুগ্ম আক্রমণ চালিয়ে এসব স্থাপনা ক্ষতিসাধন করার চেষ্টা করে
। তেহরানে বিস্ফোরণের শব্দ ও ধোঁয়ার দৃশ্য ধরা পড়ে, এবং সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া সামান্য ক্লিপে দেখা যায় আকাশে বোমাবর্ষণের আলোকচ্ছটা; যদিও সঠিক সংখ্যা ও হতাহতদের তালিকা প্রাথমিক পর্যায়ে অস্পষ্ট থেকেছে, তবে অনেক পর্যবেক্ষক বলেন কিছু উচ্চপদস্থ সামরিক ও বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তাদের মৃত্যু হতে পারে
।
হামলার খবর ছড়িয়ে পড়ার পর ইরানি কর্তৃপক্ষ জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে, জাতীয় গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণে নিয়ে যায় ও আকাশ পথে যাতায়াত সীমিত করে; ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লা আলি খামেনেই এই ঘটনাকে যুদ্ধাপরাধ হিসেবে অভিহিত করে “কঠোর প্রতিশোধের” হুঁশিয়ারি দেন, এবং IRGC-র মুখপাত্রের বক্তব্য এসেছে যে তারা যেকোনো পরিস্থিতিতে তত্ত্বাবধান করেই জবাব দেবে, সম্ভাব্য আঘাত ইসরায়েল কিংবা সংশ্নিষ্ট অন্য কোনো বাহিনীর বিরুদ্ধে চালানো হতে পারে
। ইরানের রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদমাধ্যমগুলো আংশিকভাবে সংঘটিত ক্ষয়ক্ষতি স্বীকার করলেও অনেক ক্ষেত্রে তারা দাবি করে যে কোনো বড় ধরনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা উপস্থিত ছিল না, ফলে হতাহতের তথ্য অনিশ্চিত রয়েছে; অন্যদিকে কিছু উন্মুক্ত সূত্রে বলা হয় ফেরাইদুন আব্বাসি-দাভানি ও মোহাম্মদ তারাঞ্জিচি-র মতো উল্লেখযোগ্য বিজ্ঞানীদের ওপর হামলা হয়েছে, যদিও বিষয়টি নিশ্চিত করতে গণমাধ্যম মিশ্র প্রতিবেদন রাখে
। একই সময়ে ইরানি নাগরিকদের মধ্যে ভয় ও উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে, শহরে বহু মানুষ আতঙ্কজনক দৃশ্য প্রত্যক্ষ করার পর ফোন ও ইন্টারনেট মাধ্যমে দ্রুত তথ্য লুটপাট শুরু করেন; ভারতের মতো দূরের দেশগুলোতেও দীপ্ত নজরদারি চালু হয়েছে, কারণ মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতির কারণে বিশ্বব্যাপী তেলের বাজার অস্থিরতা ও নিরাপত্তা সতর্কতা জারি হয়েছে
।
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এই হামলাকে “জীবন রক্ষায় অপরিহার্য পদক্ষেপ” হিসেবে বর্ণনা করেন এবং জানান যে তারা গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে এসব আক্রমণ চালিয়েছে; তিনি যুক্তি দেন যে ইরানের পারমাণবিক কার্যক্রম বিশ্বে নির্দেশিত প্রান্তিক গোষ্ঠীদের হাতে পতিত হতে পারে, ফলে প্রাথমিক রূপেই রোধ করতে হবে
। যুক্তরাষ্ট্র হস্তক্ষেপ নেয়নি বলে জানিয়েছে, তবে আমেরিকা ইসরায়েলের নিরাপত্তা রক্ষায় সমর্থন ব্যক্ত করেছে এবং উদ্বিগ্ন যে এই হামলা কূটনৈতিক প্রচেষ্টা ব্যাহত করবে; ইউএস সিকিউরিটি প্রোটোকল অনুযায়ী তারা মিত্রদের সুরক্ষায় যুক্ত হয়েছে, অথচ সরাসরি বা আড়াল থেকে কোনো সৈন্য অংশগ্রহণের কথা অস্বীকার করেছে
। অন্য পশ্চিমা দেশগুলোও মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখায়—কেউ ইসরায়েলের আত্মরক্ষার হালকা সমর্থন দেয়, আবার অনেকে আশঙ্কা প্রকাশ করে যে এ ধরণের আগ্রাসন মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতিশীলতা বিপন্ন করবে এবং বড় স্কেলের সংঘাতের দিকে ঠেলে দেবে; জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ জরুরি বৈঠকে ডাকা হয়েছে উত্তেজনা প্রশমনের আহ্বান জানাতে, কিন্তু স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা বা শক্তিশালী সমঝোতা কার্যত কঠিন বলে মনে হয়
আঞ্চলিক প্রভাব ইতোমধ্যে ক্রমবর্ধমান দেখা যাচ্ছে; ইরান শিয়াপন্থী গোষ্ঠীগুলোকে উস্কানির নির্দেশ দিতে পারে, যেগুলো লেবানন, সিরিয়া বা ইয়েমেনের মাধ্যমে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আক্রমণ বাড়াতে পারে; এর ফলে বহুবিধ Proxy সংঘর্ষের জটিলতা বেড়ে যেতে পারে । তেলের মূল বাজারে দাম তৎক্ষণাৎ দ্রুত ওঠানামা শুরু করে, এশিয়ার শেয়ার বাজারে নিরাপত্তাহীনতার ছাপ পড়ে এবং মধ্যপ্রাচ্যে বাণিজ্যিক জাহাজ চলাচলের ক্ষেত্রে সতর্কতা জারি হয়; উভয় দেশই বিশ্বের শক্তি সরবরাহে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখায় বিশ্ব অর্থনীতিতে ঝুঁকি বাড়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়
। পাশাপাশি জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, রাশিয়া, চীনসহ বড় শক্তি দেশগুলো দ্বিধাপূর্ণ অবস্থানে থেকে মধ্যস্থতা চেষ্টা করছে; কেউ তাত্ক্ষণিক নিন্দা জানিয়েছে, কেউ আবার শান্তি আলোচনায় ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে
।
ইসরায়েল-ইরানের এই আক্রমণ এবং এর পরবর্তী প্রতিক্রিয়া ইতিহাসে সাম্প্রতিক মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাত প্রবণতাকে আরও তীব্র করেছে; জাতীয় নিরাপত্তা, আঞ্চলিক শক্তি ভারসাম্য, পরমাণু স্থায়ীত্ব—সবই অনিশ্চিতের দিকে ধাবিত হচ্ছে
। এই পরিস্থিতির শিক্ষা হিসাবে বোঝা যায় যে পারমাণবিক শক্তির হুমকি রোধ করার নামে প্রাকভূমিতে কোনো সমঝোতা না হলে আক্রমণাত্মক পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে, যা পরবর্তীতে আরও বড় বিপর্যয়ের হাত ধরে আসতে পারে; বরং সমঝোতা ও পর্যাপ্ত পর্যবেক্ষণ-পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থার মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদী স্থায়িত্ব নিশ্চিত করা জরুরি ছিল বলেই বিশ্লেষকরা মত দিয়েছেন
বর্তমানে বিশ্ব দিব্যি দৃশ্যত যে কোনো দিন বড় ধরনের প্রতিশোধী হামলা হতে পারে—ইরানের পক্ষ থেকে ক্ষেপণাস্ত্র বা ড্রোন দ্বারা ইসরায়েলের কিছু অংশে আঘাত, সাইবার যুদ্ধ, Proxy লড়াই তীব্র হওয়ার আশঙ্কা সব জায়গায় রয়ে গেছে । কূটনৈতিক পর্যবেক্ষণকারীরা বলছেন, আগামী মাসগুলোতে আমেরিকা-ইরান ও আমেরিকা-ইসরায়েল সম্পর্কের সূক্ষ্মতা পরীক্ষিত হবে; পারমাণবিক আলোচনা পু
নরায় শুরু হলেও গভীর অবিশ্বাসের সংস্কার সহজ নয়
। অভ্যন্তর করুণ তাত্ত্বিক ও মানবিক ক্ষতি মেটানোর জন্য আন্তর্জাতিক সহায়তা, আহতদের পুনর্বাসন, শোকসন্তপ্ত পরিবার-সমর্থন প্রয়োজন, তবে সামগ্রিকভাবে স্থায়ী শান্তির যে পথ ছিল সেটা এখন কঠিন হয়েছে।
উপসংহারে, ইসরায়েল-ইরান সংঘাতের এই নতুন আক্রমণ বিশ্বকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছে যে পারমাণবিক সংক্রান্ত সংকট যখন হাতে-নিয়ে প্রচণ্ড আক্রমণাত্মক নীতিতে পরিণত হয়, তখন আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক স্থায়ীত্ব বিপন্ন হতে বাধ্য; দূরদর্শিতা ও কঠোর পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা না থাকলে ভবিষ্যতে আরও বিধ্বংসী পরিণতি অসম্ভব নয়