
ভাইভা পরীক্ষার viva ফলাফলে অসন্তোষ, শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদে পুলিশের জলকামান ও সাউন্ড গ্রেনেড প্রয়োগ
ঢাকা জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আজ সকাল থেকে শুরু হওয়া শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার্থীদের অবস্থান কর্মসূচি এক পর্যায়ে উত্তপ্ত রূপ নেয়, যখন পুলিশ জলকামান ও সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহার করে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের লিখিত ও মৌখিক উভয় পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েও প্রত্যয়নপত্র না পাওয়া প্রায় বিশ হাজার শিক্ষার্থী এই বিক্ষোভে অংশ নেন। তাদের দাবি, ভাইভা পরীক্ষার ফলাফলে বৈষম্য হয়েছে এবং বিচারপত্র বা ফল পুনর্মূল্যায়ন ছাড়া তাদের শিক্ষকতার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে।
বিক্ষোভকারীরা সকাল থেকেই প্রেসক্লাবের সামনে জড়ো হন এবং রাস্তা অবরোধ করেন। তারা দাবি করেন, লিখিত পরীক্ষায় সফল হওয়ার পরও ভাইভাতে অস্বাভাবিকভাবে ফেল করিয়ে দেওয়া হয়েছে তাদের। জাতীয় শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) এর সিদ্ধান্তকে তারা স্বেচ্ছাচারিতা বলে দাবি করছেন। তাদের মতে, ভাইভা পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশে কোনো স্বচ্ছতা ছিল না এবং এতে গোপনীয়তা ও পক্ষপাতিত্ব রয়েছে।
সকাল সাড়ে ১০টার দিকে আন্দোলনকারীরা প্রেসক্লাবের প্রবেশপথ আটকে দিলে পুলিশ কয়েকবার হুঁশিয়ারি দেয় এবং জায়গা ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধ জানায়। কিন্তু আন্দোলনকারীরা দাবি আদায়ে অনড় থাকায় সকাল ১১টা ২০ মিনিটের পর পুলিশ জলকামান ব্যবহার শুরু করে এবং কয়েকটি সাউন্ড গ্রেনেড ফাটিয়ে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে। এতে বেশ কয়েকজন আহত হন এবং আটজনকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে বলে জানা যায়।
একজন আন্দোলনকারী জানান, “আমি লিখিত পরীক্ষায় ৭২ পেয়েছি, অথচ ভাইভাতে ফেল দেখানো হয়েছে। কোনো কারণ ছাড়াই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এটা পুরোপুরি অন্যায়।” আরেকজন বলেন, “ভাইভা তো মৌখিক পরীক্ষা, সেখানে নম্বর কীভাবে কমানো হলো, কোনো ব্যাখ্যা নেই। আমাদের ভবিষ্যৎ ধ্বংস করা হচ্ছে।”
অন্যদিকে পুলিশ দাবি করেছে, আন্দোলনকারীরা অনুমতি ছাড়াই রাস্তা অবরোধ করে সাধারণ মানুষের চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি করছিলেন এবং প্রেসক্লাবের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হচ্ছিল। পুলিশের রমনা বিভাগের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার জিসানুল হক জানান, “তাদের তিনবার মৌখিকভাবে অনুরোধ করা হয়েছিল জায়গা খালি করতে। কিন্তু তারা আন্দোলন চালিয়ে যায়, ফলে বাধ্য হয়ে আমরা জলকামান ও সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহার করি।”
এদিকে এনটিআরসিএ এ বিষয়ে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে সংস্থাটির অতীত মন্তব্য অনুযায়ী, ভাইভা পরীক্ষা গ্রহণ ও ফলাফল প্রকাশ একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া এবং এতে কোনো অনিয়ম হয়নি। যদিও আন্দোলনকারীরা এই বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করে বলছেন, হাজার হাজার প্রার্থী লিখিত ও প্রিলিমিনারিতে সফল হওয়ার পর ভাইভাতে এভাবে ফেল করানো যুক্তিসংগত নয়।
প্রসঙ্গত, ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় প্রায় ১ লাখ ৫৩ হাজার প্রার্থী অংশ নেন। এর মধ্যে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন প্রায় ৮১ হাজার জন। ভাইভা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন প্রায় ৬০ হাজার জন। কিন্তু চূড়ান্তভাবে সনদ পেয়েছেন মাত্র ৪০ হাজার ৫২০ জন। অর্থাৎ প্রায় ২০ হাজারেরও বেশি পরীক্ষার্থী চূড়ান্তভাবে বাদ পড়েছেন, যা নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।
অনেকেই এই ফলাফলকে ‘অস্বাভাবিকভাবে কম পাশের হার’ হিসেবে বর্ণনা করছেন। পরীক্ষার্থীদের অভিযোগ, যাদের ভাইভাতে ফেল দেখানো হয়েছে তাদের অনেকে উচ্চতর শিক্ষাগত যোগ্যতা ও ভালো লিখিত নম্বর অর্জন করেছেন। এত সংখ্যক প্রার্থীর ভাইভা থেকে বাদ পড়া বাস্তবসম্মত নয় বলে দাবি তাদের।
বিক্ষোভকারীরা বলছেন, যদি ফলাফলে স্বচ্ছতা না আনা হয় এবং পুনর্মূল্যায়নের ঘোষণা না দেওয়া হয়, তাহলে তারা দেশব্যাপী বৃহত্তর আন্দোলনের ডাক দেবেন। “আমরা রাজপথেই থাকব, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত। আমাদের কষ্ট ও স্বপ্ন একজায়গায় ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে,” বলেন এক নারী প্রার্থী, যিনি বরিশাল থেকে ঢাকায় এসেছেন এই কর্মসূচিতে অংশ নিতে।
এই ঘটনার প্রেক্ষিতে শিক্ষাবিদ ও বিশ্লেষকেরা বলছেন, শিক্ষক নিয়োগের মতো স্পর্শকাতর বিষয়ে এমন অস্পষ্টতা দেশের শিক্ষাব্যবস্থার প্রতি আস্থা নষ্ট করতে পারে। তারা এনটিআরসিএকে দ্রুত ও স্বচ্ছ তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন যাতে প্রার্থীদের মধ্যে সৃষ্ট হতাশা দূর করা যায় এবং উপযুক্তরা ন্যায্যতা পায়।
আজকের এই ঘটনার মাধ্যমে পরিষ্কার হলো যে, ১৮তম নিবন্ধনের ভাইভা ফলাফল নিয়ে অসন্তোষ গভীর এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি বিশ্বাসহীনতা বাড়ছে। বিষয়টি দ্রুত সমাধান না হলে এটি ভবিষ্যতের শিক্ষানীতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে, এবং রাষ্ট্রের শিক্ষা ও নিয়োগ নীতির বিশ্বাসযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে।
source: voice7 news