
পল্টনে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযানকালে গুলি চালায় মাদকচক্র, হাসপাতালে নেওয়া দুই সদস্যের একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক
রাজধানীর প্রাণকেন্দ্র পল্টন এলাকায় বুধবার (১৮ জুন ২০২৫) দিবাগত রাত গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মাদকবিরোধী অভিযানে গেলে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের দুই সদস্য গুলিবিদ্ধ হন। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে তিনজন সন্দেহভাজন মাদক কারবারিকে গ্রেফতার করা হয় এবং একটি প্রাইভেট কার জব্দ করা হয়।
ডিবি পুলিশের লালবাগ বিভাগীয় একটি টিম কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালের বিপরীত পাশে প্রাইভেট কার থামানোর চেষ্টা করলে ভেতরে থাকা মাদক কারবারিরা হঠাৎ গুলি চালায়। প্রথমত গাড়ি থামানোর আগেই গুলির ঘটনা ঘটে, যার কারণে সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) মো. আতিক হাসানের পেটের বাম পাশে এবং কনস্টেবল সুজনের বাঁ হাঁটুতে গুলি লাগে। পরে তাদের দ্রুত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়।
আহত এএসআই আতিক হাসান ও কনস্টেবল সুজনকে রাতেই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসকরা জানান, আতিক হাসানের অবস্থা ‘আশঙ্কাজনক’, পেটের গুলিবিদ্ধ স্থানের কারণে তার দ্রুত অস্ত্রোপচার প্রয়োজন হতে পারে। কনস্টেবল সুজনের গুলিবিদ্ধ পায়ের আঘাত গুরুতর হলেও স্থিতিশীল অবস্থা বলে জানা গেছে। চিকিৎসা খরচ সরকার বহন করবে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, অভিযানের নেতৃত্ব দেন লালবাগ বিভাগের সিনিয়র সহকারী কমিশনার (এসি) এনায়েত কবির শোয়েব। গোপন তথ্যের ভিত্তিতে তল্লাশি ও চেকপয়েন্ট স্থাপনের পরিকল্পনা ছিল। প্রাইভেট কার থামানোর সময় মধ্যে থেকে গুলি ছোড়া হলে পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যেতে পারে, কিন্তু ডিবি পুলিশ দ্রুত প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে আহতদের সুরক্ষিত জায়গায় নিয়ে যায়।
গ্রেফতারকৃত তিনজনের কাছ থেকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যাচ্ছে, তারা মাদক পরিবহনের সঙ্গে জড়িত একটি চক্রের অংশ। জব্দ করা প্রাইভেট কারেও মাদকদ্রব্য ও অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। তদন্তকারীরা মূল সিন্ডিকেটের ঠিকানা উদ্ঘাটনে দ্রুত তল্লাশি ও অন্যান্য তথ্য যাচাইয়ে তৎপর রয়েছেন। আটককৃতদের পরিচয় এখনও সরকারিভাবে প্রকাশ করা হয়নি।
পুলিশ সদরদপ্তর জানিয়েছে, ঘটনাটির পূর্ণাঙ্গ তদন্ত হবে এবং দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট ইউনিটের সঙ্গে সমন্বয়ে তদন্ত কমিটি গঠন হতে পারে, যা প্রাপ্ত আলামত ও ডিজিটাল প্রমাণাদি বিশ্লেষণ করে প্রতিবেদন দেবে। তদন্ত শেষে পুনরাবৃত্তি প্রতিরোধে সুপারিশ জারি করা হবে।
স্থানীয় বাসিন্দারা রাতের গুলির শব্দে চাঞ্চল্য অনুভব করেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও বিষয়টি দ্রুত ছড়িয়ে যায়; বেশিরভাগ মানুষ পুলিশের সাহসিকতা এবং তৎপরতা প্রশংসা করেন, তবে নেটিজেনদের মধ্যে উদ্বেগও দেখা গেছে যে, এ ধরনের হামলা থেকে ভবিষ্যতে কীভাবে আরও সুরক্ষা নিশ্চিত করা হবে।
বিশেষভাবে লক্ষ্যনীয় যে, ঢাকাসহ সারাদেশে মাদক চক্রগুলো নতুন কৌশল ও অস্ত্র নিয়ে পুলিশবিরোধী মনোভাব গ্রহণ করছে। গত কয়েক মাসে বিভিন্ন এলাকায় মাদকবিরোধী অভিযানে সহিংস প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে, যা নিরাপত্তা পরিস্থিতি জটিল করছে। এ কারণেই গোয়েন্দা প্রযুক্তি উন্নতকরণ, দ্রুত প্রতিক্রিয়া ইউনিট প্রয়োগ এবং পরিকল্পনা আরও মজবুত করার দাবি তীব্র হচ্ছে।
আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিমত অনুযায়ী, অভিযান আগে থেকে গভীরভাবে গোয়েন্দা তদারকি ও রিস্ক বিশ্লেষণ অপরিহার্য। সিসিটিভি ফিড, মোবাইল ট্র্যাকিং এবং কমিউনিটির সহায়তা জোরদার করে তথ্য সংগ্রহ বাড়ানো যেতে পারে। পাশাপাশি, অপারেশন টিমে পর্যাপ্ত ব্যাকআপ সাপোর্ট নিশ্চিত ও জরুরি চিকিৎসা ব্যবস্থা প্রাথমিক পর্যায়ে প্রস্তুত রাখা জরুরি।
মাদক চক্রের আর্থিক লেনদেন ও আন্তঃসিন্ডিকেট যোগাযোগ নির্ণয়ে আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিটের সহায়তা গ্রহণ প্রয়োজন। আন্তর্জাতিক সহযোগিতার আওতায় প্রতিবেশী দেশগুলো ও আন্তর্জাতিক সংস্থার তথ্য বিনিময়ের মাধ্যমে চক্রের মূল উৎস নির্ণয়ের কাজ ত্বরান্বিত হতে পারে।
সামাজিক সচেতনতায় গুরুত্ব দিয়ে হটলাইন ও স্থানীয় কমিউনিটির রিপোর্টিং অধিকতর কার্যকর করা আবশ্যক। জনমানসের সহায়তায় মাদক প্রবাহ সংকোচন এবং অভিযানের পূর্বে স্থানীয় পর্যায় থেকে তথ্য সংগ্রহে সহায়তা পাওয়া যেতে পারে। পুনর্বাসন ও সচেতনতামূলক কর্মসূচিও মাদকের চাহিদা হ্রাসে ভূমিকা রাখবে।
চিকিৎসা ব্যবস্থায় দ্রুততম সেবা নিশ্চিত করতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও পুলিশ ক্যাম্পের সমন্বয় জোরদার করতে হবে। আহত সদস্যদের ফলো-আপ এবং পুনর্বাসন প্রক্রিয়া পরিকল্পিতভাবে পরিচালনা করলে তাদের দ্রুত স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরার সুযোগ বৃদ্ধি পাবে।
এ ঘটনায় মাদকবিরোধী লড়াইয়ের গভীর চ্যালেঞ্জ আবার浮 তুলে ধরেছে: যে কোনো অভিযানেই পুলিশের জীবনহানির ঝুঁকি লুকিয়ে থাকে। তাই স্ট্র্যাটেজিক প্ল্যানিং, প্রযুক্তিনির্ভর গোয়েন্দা, কমিউনিটি পার্টনারশিপ, এবং চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার সমন্বিত দৃষ্টিভঙ্গি জরুরি।
শেষে, পল্টনে এই ঘটনাটি প্রমাণ করে যে মাদকবিরোধী অভিযানে অপ্রত্যাশিত আক্রমণের মোকাবিলা করার ক্ষমতা বাড়াতে রিয়েল-টাইম যোগাযোগ, পর্যাপ্ত বাহক দল ও চিকিৎসা সাপোর্ট অপরিহার্য। পাশাপাশি, মূল চক্রধারীদের চিহ্নিতকরণে দ্রুত পদক্ষেপ এবং সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করা সম্ভব।