
লন্ডনগামী বিমানের টেকঅফের পর অস্বাভাবিক অবনমন ও আগুন, দেশের ও আন্তর্জাতিক তদন্ত সংস্থার তত্ত্বাবধানে অনুসন্ধান
শুধুমাত্র একজন বেঁচে গেলেন
২০২৫ সালের ১২ জুন, বিকাল ১টা ৩৮ মিনিটের দিকে আহমেদাবাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে লন্ডন গেটউইক গামী এয়ার ইন্ডিয়া ফ্লাইট AI171 (বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার) উড্ডয়ন করার মাত্র কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই বিধ্বস্ত হয়
। বিমানে ২৪২ জন আরোহী ছিলেন—২৩০ যাত্রী ও ১২ ক্রু—যাদের মধ্যে ছিলেন ১৬৯ ভারতীয়, ৫৩ ব্রিটিশ, ৭ পর্তুগিজ ও ১ কানাডিয়ান নাগরিক
। বিমান ত্যাগের পর প্রায় ৩০ সেকেন্ডে “মে-ডে” সংকেত দেওয়ার পর তা দ্রুত নিম্নগামী হয়ে পড়ে এবং স্থানীয় সময় মাত্র কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে মেঘানীনগরের একটি মেডিকেল কলেজের ছাত্রাবাস ভবনে আছড়ে পড়ে
। দুর্ঘটনাস্থলটি ছিল জনবহুল এলাকা, যা দুপুরের খাবার বিরতির সময় ছিল; ফলে মাটিতে অনেক লোকও ক্ষতিগ্রস্ত হন।
দুর্ঘটনার তদন্ত-প্রক্রিয়া এবং উদ্ধারকাজ শুরু হওয়ার পর সম্পূর্ণ তদন্তের পূর্ব ফলাফল এখনও প্রকাশিত হয়নি। তবে সামান্য সময়েই জানা গিয়েছে, বিমানটি পর্যাপ্ত উচ্চতা অর্জন করতে না পেরে অবনমনের মধ্য দিয়ে পড়ে যায়। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায় প্রথমে সামান্য উঁচু হয়েও দ্রুত নিচে নামছে, এবং দৃশ্যের বাইরে গিয়ে বিস্ফোরণ ঘটে
হতাহত ও পরিসংখ্যান
এয়ার ইন্ডিয়া কর্তৃপক্ষ এবং কর্তৃপক্ষের প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, বিধ্বস্ত বিমানের ২৪১ আরোহীর মধ্যে মাত্র একজনই জীবিত উদ্ধার হন; বেঁচে যাওয়া ব্যক্তির নাম প্রকাশ করা হয়েছে—তিনি ছিলেন ব্রিটিশ মূলের একজন নাগরিক, ১১A সিটে বসলেন এবং জরুরি প্রস্থান পথের কাছাকাছি ছিলেন
। বেঁচে যাওয়া ওই ব্যক্তির ইংরেজি নাম প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে ভিস্বশ কুমার রমেশ; তিনি বলেন, “আমি যখন চোখ খুললাম, চারপাশে শুধুই ধ্বংস-দূর্বিসহ দৃশ্য; আমি দৌড়ে বেরিয়ে আসি।” তার পরিস্থিতি গুরুতর হলেও বর্তমানে স্থিতিশীল
মাটিতে থাকা হতাহতের সংখ্যা সম্পর্কে ওড়াচলা থেকে জানা গেছে অন্তত ২৮ থেকে ৩৫ জন সাধারণ মানুষ নিহত হন, যাদের মধ্যে ছিল মেডিকেল কলেজের ছাত্র ও কর্মচারীরা
। প্রাথমিক অপশমালনায় মৃত্যুর সংখ্যা দ্বিগুণভাবে গণনা হয়ে ২৯৪ বলা হয়েছিল; পরে পুনঃমুল্যায়ন করে সংখ্যা উল্লেখ করা হলো “২৪০ এর বেশি” বা আনুমানিক ২৪১, যাদের ২৬৯টি মরদেহ স্থানীয় সিভিল লাইনস হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে পরিচয় নির্ণয়ের জন্য DNA টেস্টের অপেক্ষায়
। বিমানে সিট সংখ্যানুযায়ী ২১৭ প্রাপ্তবয়স্ক, ১১ শিশু ও ২ শৈশবকসহ মোট আরোহী ছিলেন
। উল্লেখ্য, প্রাক্তন গুজরাট মুখ্যমন্ত্রী বিজয় রূপানি-ও এই বিমানে ছিলেন এবং তিনি নিহত বলে জানা গিয়েছে
। মাটিতে নিহতদের মধ্যে অন্তত ৫০ ছাত্রাবাসের বাসিন্দা গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন; ৪১ জনেরও চিকিৎসা চলছে
দুর্ঘটনার কারণ ও তদন্ত
ভারতের বিমান দুর্ঘটনা তদন্ত ব্যুরো (Aircraft Accident Investigation Bureau) প্রধানত তদন্ত করছে; যুক্তরাজ্যের AAIB, যুক্তরাষ্ট্রের NTSB/FAA ও বোয়িং কোম্পানি-সহ আন্তর্জাতিক ভাবে অনুসন্ধান চলছে
। প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে টেকঅফের পর বিমান পর্যাপ্ত উচ্চতা অর্জন করতে পারেনি, ল্যান্ডিং গিয়ার ও ফ্ল্যাপস অস্বাভাবিক অবস্থায় থাকতে পারে; এর কারণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে
। ফ্লাইট ডেটা রেকর্ডার ও ককপিট ভয়েস রেকর্ডার (ব্ল্যাক বক্স) উদ্ধার করা হয়েছে এবং তত্ত্বাবধানে বিশ্লেষণ চলছে
এছাড়া আবহাওয়া অনুমান ছিল স্থিতিশীল, দৃষ্টি স্বচ্ছ, কোন উল্লেখযোগ্য ঝড় বা বজ্রপাতের খবর ছিল না
। তাই যান্ত্রিক ত্রুটি, পাইলট ইনপুট, সিস্টেমবোধগম্যতা বা অন্যান্য কারিগরি/মানবিক দিকগুলো যাচাই করা হচ্ছে। বিমানসম্পর্কিত ইতিহাসে বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনারের আগে কোনও ফ্যাটাল দুর্ঘটনা ছিল না, তাই এই দুর্ঘটনা বিশ্ব বিমানযাত্রা নিরাপত্তায় বিশেষ উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে
। বোয়িং ২০১১ সালে এই সিরিজ বাজারে আনার পর এটাই প্রথম ফ্যাটাল ক্র্যাশ
উদ্ধার ও স্থানীয় প্রতিক্রিয়া
দুর্ঘটনার পর ফায়ার সার্ভিস, সিভিল ডিফেন্স ইউনিট, সেনাবাহিনী দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে; তবে প্রায় ১.২৫ লক্ষ লিটার জ্বালানির তীব্র ফলাফল নিয়ে আগুন এতটাই প্রচন্ড ছিল যে জীবিত উদ্ধার কঠিন ছিল
। স্থানীয় বাসিন্দারা ও প্রথম সারির প্রত্যক্ষদর্শীরা দ্রুত যোগাযোগ করেন এবং আহতদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়; কিন্তু বিমানের যাত্রীদের প্রায় কেউই বেঁচে যাননি, বেঁচে যাওয়া কেবল একজনই
। মাটিতে আহতদের মধ্যে অনেকেই লোমশ ভেঙে পড়া ভবনের ছাদ থেকে লাফিয়ে বেঁচে গেছেন বলে এলাকাবাসী জানান
আহমেদাবাদ বিমানবন্দর কয়েক ঘন্টা বন্ধ ছিল; পরবর্তীতে সীমিত রূপে চালু হয়। তবে কমিউনিটি প্রবল মানসিক ট্রমার মধ্যে পড়েছে; স্থানীয় হাসপাতাল, কনসোলার সার্ভিস, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন মানসিক সহায়তা দিচ্ছে
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও ক্ষতিপূরণ
ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার ও রাজা চার্লস, কানাডা ও পর্তুগালে সংশ্লিষ্ট কনস্যুলার সেবা শোকজ ঘোষণা করেছেন ও সাহায্য প্রেরণ করেছেন
। এয়ার ইন্ডিয়া-মালিক টাটা গ্রুপ নিহত পরিবারকে ১ কোটি রুপি (~১২.৫ লাখ USD) ক্ষতিপূরণ এবং আহতদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসন সহায়তা দেবে; পাশাপাশি বিধ্বস্ত ছাত্রাবাস ভবন পুনর্নির্মাণেও সাহায্য করবে
। বোয়িং, GE এ্যারোস্পেস ও FAA বিশেষজ্ঞ দল পাঠিয়ে cockpit data বিশ্লেষণ করছে
শেয়ার বাজারে বোয়িং স্টক হঠাৎ পড়ে যায়; কারণ নতুন ফ্যাটাল ক্র্যাশে বিনিয়োগকারীরা উদ্বিগ্ন
। আন্তর্জাতিক এয়ারলাইন্স জোনে নিরাপত্তা প্রোটোকল আরও কড়া করে নেওয়ার আহ্বান উঠেছে; যাত্রীদের উদ্বেগ ও নিয়মকানুন পুনর্মূল্যায়নের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে
ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ ও শিক্ষা
দুর্ঘটনার পূর্ণ তদন্ত প্রতিবে
দন কয়েক মাস সময় নিতে পারে; তবে এখন থেকেই কিছু মূল বিষয়ের দিকে মনোযোগ দেওয়া হচ্ছে:
ব্ল্যাক বক্সের প্রযুক্তিগত বিশ্লেষণে যান্ত্রিক অস্বাভাবিকতা নির্ণয়।
পাইলটের সিদ্ধান্ত-প্রক্রিয়া, প্রশিক্ষণ ও সম্ভাব্য মানবিক ত্রুটি যাচাই।
সিস্টেম মনিটরিং ও অটো-পাইলট/ম্যানুয়াল মিশ্রণের সময় বিমান কনফিগারেশন বিশ্লেষণ।
জরুরি প্রস্থান পথের ডায়নামিক্স, যাত্রী সিটিং কনফিগারেশন ইত্যাদি।
বিমান বন্দর সম্পর্কিত কোনো ATC বা যোগাযোগের মিসম্যাচ ছিল কিনা, তা মূল্যায়ন।
মাটিতে ভবনের নির্মাণ ও জরুরি সিচুয়েশনে জনসমাগম পর্যালোচনা, যাতে ভবিষ্যতে আশপাশের জনবহুল এলাকায় এ ধরনের ঝুঁকি কমানো যায়।
এই পরীক্ষণ-প্রক্রিয়া থেকে যে সেফটি সংশোধনীগুলো আসবে, সেগুলোকে দ্রুত আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে অন্তর্ভুক্ত করা হবে
সংক্ষেপে:
আহমেদাবাদে এয়ার ইন্ডিয়া Flight AI171-এর বিধ্বস্ত হওয়া ২০২৫ সালের ১২ জুনের সবচেয়ে দুঃখজনক ঘটনা, যেখানে ২৪১ আরোহী ও অতিরিক্ত মাটির মানুষ নিহত হয়েছেন এবং মাত্র একজন বেঁচে গেছেন। ঘটনার তদন্ত ও প্রভাব বহুমুখী—মৃত্যুর কারণ নিখুঁতভাবে উদঘাটন, আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা মান উন্নয়ন, মানসিক সহায়তা ও ভবিষ্যতের ঝুঁকি হ্রাসের জন্য শিক্ষা গ্রহণ। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সম্মিলিত প্রচেষ্টা চলছে যাতে এ ধরনের মর্মান্তিক দুর্ঘটনা আর না ঘটে।