শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার শুনানি আজ, অ্যামিকাস কিউরি নিয়োগ ট্রাইব্যুনালের

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আজ শুনানি, পল্টনে দেওয়া বক্তব্য ঘিরে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে শুরু হয় আদালত অবমাননার প্রক্রিয়া


আদালত অবমাননার মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। আজ, ১৯ জুন ২০২৫, এই মামলার পূর্ণাঙ্গ শুনানি অনুষ্ঠিত হচ্ছে ট্রাইব্যুনালের তিন সদস্যের বেঞ্চে। মামলার গুরুত্ব বিবেচনায় আদালত একজন সিনিয়র আইনজীবী এ. ওয়াই. মোশিউজ্জামানকে অ্যামিকাস কিউরি বা আদালতের বন্ধু হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন, যিনি মামলার আইনগত দিক বিশ্লেষণ করে আদালতকে সহায়তা করবেন।

এই মামলা শুরু হয় শেখ হাসিনার পল্টনে দেওয়া একটি বক্তব্যকে কেন্দ্র করে, যেখানে তিনি দাবি করেন, “একটি ট্রাইব্যুনাল ২২৫ জন মানুষ হত্যার লাইসেন্স দিয়েছে”। ৩০ এপ্রিল দেওয়া এই বক্তব্য বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর ব্যাপক বিতর্কের সৃষ্টি হয়। আদালত মনে করে, এটি বিচার বিভাগের প্রতি অবমাননাকর এবং জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়াতে পারে।

এই মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ২৫ মে তারিখে শেখ হাসিনা এবং অপর এক ব্যক্তি শাকিল আহমেদ বুলবুলকে আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেয় পত্রিকার মাধ্যমে। কিন্তু নির্ধারিত তারিখে তারা কেউই আদালতে উপস্থিত হননি। এরপরও ৩ জুন পুনরায় শুনানি অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে তারা অনুপস্থিত থাকেন। তাদের অনুপস্থিতি বিচারিক প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করে। ফলস্বরূপ, আদালত নিজস্ব ক্ষমতা বলে অ্যামিকাস কিউরি নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয়।

অ্যামিকাস কিউরি কী?

‘অ্যামিকাস কিউরি’ একটি ল্যাটিন শব্দ, যার অর্থ ‘আদালতের বন্ধু’। আইনি পরিভাষায়, অ্যামিকাস কিউরি হলেন এমন একজন ব্যক্তি যিনি মামলার পক্ষ নয়, তবে আদালতকে একটি নিরপেক্ষ মতামত দিয়ে সহায়তা করতে নিযুক্ত হন। এই ধরনের নিযুক্তি সাধারণত জটিল, সংবেদনশীল বা নজিরবিহীন মামলায় দেখা যায়। এ. ওয়াই. মোশিউজ্জামান একজন অভিজ্ঞ আইনজীবী, যিনি অতীতে বিভিন্ন সংবেদনশীল মামলায় যুক্ত ছিলেন। তার নিযুক্তি আদালতের নিরপেক্ষতা এবং মামলার গুরুত্বকে তুলে ধরে।

বক্তব্য নিয়ে বিতর্ক

শেখ হাসিনার বিতর্কিত বক্তব্যটি ছিল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের অতীত রায় প্রসঙ্গে। সেখানে তিনি দাবি করেন, এই ট্রাইব্যুনাল মানুষের ওপর “হত্যার লাইসেন্স” দিয়ে দিয়েছে। যদিও বক্তব্যে কোনো বিচারক বা নির্দিষ্ট রায় উল্লেখ করা হয়নি, তবু এটি বিচার বিভাগকে অপমান করার সামিল বলে আদালত মনে করে।

বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও সম্মান রক্ষা করা যে কোনো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আদালতের রায় নিয়ে নাগরিকদের প্রশ্ন থাকতে পারে, তবে তা প্রকাশ করতে হলে আইনসঙ্গত ভাষা ও প্রক্রিয়া অনুসরণ করা আবশ্যক। একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও দেশের গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে শেখ হাসিনার বক্তব্য সমাজে গভীর প্রভাব ফেলতে পারে।

বিচার বিভাগ মনে করছে, এই বক্তব্যের মাধ্যমে জনগণের মধ্যে বিচার বিভাগের প্রতি অনাস্থা তৈরি হতে পারে। তাই আদালত বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে এবং মামলার বিচার কার্যক্রম শুরু করে।

রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া

এই মামলার প্রেক্ষিতে রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। আওয়ামী লীগ দাবি করছে, এটি একটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা এবং শেখ হাসিনা কেবল তার মত প্রকাশের অধিকার প্রয়োগ করেছেন। তাদের মতে, একজন নাগরিক হিসেবে তার বাকস্বাধীনতা রয়েছে এবং তিনি বিচার বিভাগের সমালোচনা করতেই পারেন।

অন্যদিকে, বিরোধী দল ও নাগরিক সমাজের একটি অংশ মনে করছে, আদালতের সম্মান রক্ষা করাই প্রথম দায়িত্ব। তারা বলছে, বিচার বিভাগের প্রতি অবমাননাকর মন্তব্য করলে সেটি আইনের আওতায় আসা স্বাভাবিক। এই ক্ষেত্রে আদালতের পদক্ষেপ যুক্তিযুক্ত এবং সময়োপযোগী।

গণমাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও নাগরিক ফোরামগুলোতেও ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে। কেউ বলছেন, এই মামলায় আদালত অতিরিক্ত কঠোর হচ্ছে, আবার কেউ মনে করছেন, ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে এটাই সঠিক সময় আইনের কঠোর প্রয়োগের।

মামলার গুরুত্ব

এই মামলার গুরুত্ব শুধু শেখ হাসিনা বা ট্রাইব্যুনালেই সীমাবদ্ধ নয়। এটি বাংলাদেশের আইনি কাঠামো, গণতন্ত্র, মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং বিচার বিভাগের গ্রহণযোগ্যতার প্রশ্নেও গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে। আদালতের পরবর্তী পদক্ষেপগুলো কেবল এ মামলার ফল নির্ধারণ করবে না, বরং ভবিষ্যতে রাজনৈতিক ও সামাজিক বিতর্কের ক্ষেত্রে আইনি ব্যাখ্যার ক্ষেত্রও তৈরি করবে।

আজকের শুনানি

আজ, ১৯ জুন ২০২৫, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আদালত অবমাননার মামলার গুরুত্বপূর্ণ শুনানি অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এই শুনানিতে অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে নিযুক্ত সিনিয়র আইনজীবী এ. ওয়াই. মোশিউজ্জামান মামলার আইনগত দিক ব্যাখ্যা করে আদালতকে মতামত প্রদান করবেন। আদালত তার বক্তব্য বিশ্লেষণ করে পরবর্তী পদক্ষেপ নির্ধারণ করবে।

শুনানির পরিপ্রেক্ষিতে আদালত আজ নতুন কোনো আদেশ জারি করতে পারে—যেমন, আসামিদের বিরুদ্ধে হাজিরার জন্য নতুন সমন, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা কিংবা আদালত অবমাননার অভিযোগে সরাসরি অভিযুক্ত ঘোষণা করা। এই মামলার প্রেক্ষাপট এবং সাংবিধানিক গুরুত্ব বিচার করে, আদালত তার সিদ্ধান্তে দৃষ্টান্তমূলক বার্তা দিতে পারে।

বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল বেঞ্চ অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে মামলার কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। বিচারিক প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ও ন্যায়পরায়ণতা বজায় রাখতেই আদালত অ্যামিকাস কিউরি নিয়োগসহ নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।

এই মামলার রাজনৈতিক, সামাজিক এবং সাংবিধানিক প্রভাব এতটাই গভীর যে, শুধু দেশীয় নয়—আন্তর্জাতিক মহলেও এর দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখা হচ্ছে। আইনের শাসন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং বিচার বিভাগের মর্যাদা—এই তিনটি মৌলিক ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে রয়েছে মামলাটির ভবিষ্যৎ পরিণতি।

Related Posts

The Day Bangladesh Rose: July 1 Uprising That Shook a Nation

A detailed report on the July 1, 2024 uprising in Bangladesh that began as a student protest over job quotas and evolved into a nationwide movement, ending in a historic political shift. Published July 1, 2025.

30 Charged in Abu Sayed Murder: Justice Process Begins Under ICT in 2025

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You Missed

The Day Bangladesh Rose: July 1 Uprising That Shook a Nation

  • By Chris
  • July 1, 2025
  • 21 views
The Day Bangladesh Rose: July 1 Uprising That Shook a Nation

Rising Dengue Cases in Bangladesh: 42 Deaths and Nearly 10,000 Hospitalized in 2025

  • By Chris
  • June 30, 2025
  • 14 views
Rising Dengue Cases in Bangladesh: 42 Deaths and Nearly 10,000 Hospitalized in 2025

30 Charged in Abu Sayed Murder: Justice Process Begins Under ICT in 2025

  • By Chris
  • June 30, 2025
  • 36 views
30 Charged in Abu Sayed Murder: Justice Process Begins Under ICT in 2025

July Charter 2025 in Limbo as Political Talks Stall Over Key Reforms

  • By Chris
  • June 30, 2025
  • 55 views
July Charter 2025 in Limbo as Political Talks Stall Over Key Reforms

Iran Strongly Condemns Former US President Trump’s Claim of Saving Khamenei in 2025, Calls Remarks Disrespectful

  • By Chris
  • June 28, 2025
  • 69 views
Iran Strongly Condemns Former US President Trump’s Claim of Saving Khamenei in 2025, Calls Remarks Disrespectful

4 killed, 14 injured in bus-truck collision on Dhaka-Mawa Expressway

  • By Chris
  • June 28, 2025
  • 53 views
4 killed, 14 injured in bus-truck collision on Dhaka-Mawa Expressway