16 জুন 2025 নারায়ণগঞ্জ গণপিটুনি: যুবকের নৃশংস খুনে ন্যায়বিচার সংকটে দেশ

ছিনতাই সন্দেহে নারায়ণগঞ্জের বান্দর উপজেলায় গণপিটুনিতে এক যুবকের মৃত্যু; প্রশাসনের ত্বরিত পদক্ষেপ ও আইনের শাসন ফেরাতে স্থানীয়দের চাপ বৃদ্ধি।

১৬ জুন ২০২৫ নারায়ণগঞ্জ–বান্দর উপজেলা ডাকসিন লক্ষ্মণখোলা এলাকায় সোমবার ভোরে সন্ত্রাসী সন্দেহে এক যুবককে স্থানীয়রা ধরে পেটিয়ে হত্যা করেছে। ঘটনার পরপরই পুলিশ লাশ উদ্ধার করে এবং দুইজনকে গ্রেফতার করে; এই নৃশংস ঘটনা দেশের বিচারহীনতা ও স্বীয় হাতে বিচার নেয়ার প্রবণতা নিয়ে নতুনভাবে প্রশ্নচিহ্ন তুলেছে।

বান্দর থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) তারিকুল ইসলাম জানান, ভোর আনুমানিক ২:৩০ মিনিটে অতন্দ্র প্রহরীদের মধ্যে কঠিন অভ্যস্ত হতে থাকা এই যুবকটি পাশের গাছঝোপে লুকিয়ে ছিল। এলাকাবাসী তাকে চিহ্নিত করে সন্দেহভাজন চোর বা ছিনতাইকারী হিসেবে ধরে ফেলে। ভয়ে-ভয়ে গুণ্ডা-ডাবরা নামে সুপরিচিত এই যুবকটিকে তারা নির্মমভাবে পিটিয়ে ফেলে, তখন পর্যন্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছায়নি।

“প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছে, লোকজন তাকে পেয়ে প্রচণ্ড মারাত্মক লাঠিপেটা চালাতে থাকে,” ওসি ইসলাম বলেন। “আমাদের দল পৌঁছানোর আগেই তার অজয় অবস্থা সৃষ্টি হয়।” পুলিশ দ্রুত খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় এবং গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়, যেখানে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে পুলিশ সোহান (৩০) ও সামি (২৫) নামে দুই জনকে আটক করেছে, যারা এলাকার একটি স্থানীয় জ্বালানি বিতরণ কোম্পানিতে চাকরি করতো। ওসি তারিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, “আমরা তাদের বিরুদ্ধে বিস্তারিত তদন্ত পরিচালনা করছি। তাদের কোনো ভূমিকা থাকলে আইনের আওতায় আনা হবে।” আটক দুজনকে সোমবারই আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।

নিহত যুবকের পরিচয় এখনো নিশ্চিত হয়নি। পরিবারের খোঁজ মিলেনি, ফলে ময়নাতদন্তের পরমুহূর্তে তথ্য সংগ্রহ ও মামলা পরিচালনা জটিলতা তৈরি হয়েছে। পুলিশ স্থানীয় সিসিটিভি ফুটেজ যাচাই করছে এবং আশপাশের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলছে, যাতে পুলিশের তদন্ত কাজে সহায়তা করতে পারে কেউ।

বাংলাদেশে সাম্প্রতিক বছরগুলিতে গণপিটুনির ঘটনা বেড়েছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এলাকাবাসী নিরাপত্তাহীনতার শিকার হয়ে, আইনের শাসন ও দ্রুত বিচার না পেয়ে, স্বীয় হাতে বিচার নিতে উৎসাহিত হয়। আইন বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন যে, এ ধরনের বিচারহীন আচরণ দেশের অপরাধ বিরোধী প্রতিষ্ঠিত প্রক্রিয়াকে দুর্বল করে এবং সমাজে অসামাজিক প্রবণতা বৃদ্ধি করে।

নরায়ণগঞ্জ লিগ্যাল এইড সোসাইটির মানবাধিকার কর্মী নজরুল ইসলাম অভিযোগ করেন, “একজন সন্দেহভাজন চোর হলেও—যে person আদালতে অপরাধ প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত সে নির্দোষ। গণপিটুনি একটি বেআইনি পথ, যা মানবাধিকার ও ন্যায়বিচার ব্যবস্থাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।”

বান্দর থানাসহ নারায়ণগঞ্জ পুলিশ পুরো জেলায় অসহায় ও হতদরিদ্রদের নিরাপত্তা জোরদার করতে পল্লী ও নগর দুই এলাকায় বিশেষ টহল বৃদ্ধি করেছে। শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা স্থানীয় কমিউনিটি নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে দ্রুত অপরাধ দমন ও আইনগত প্রক্রিয়া সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টির উদ্যোগ নিয়েছেন।

সোশ্যাল মিডিয়ায় #বিচার_নয়_গণপিটুনি ও #নারায়ণগঞ্জ_সংঘর্ষ হ্যাশট্যাগে ব্যাপক আলোচনা দেখা গেছে। অনেকে সম্পূর্ণরূপে মোবাইল ভয়াল ঘটনার নিন্দা জানাচ্ছেন, অনেকে অভিযোগ করছেন পুলিশ অপরাধ দমন ও প্রতিকারের ক্ষেত্রে অদক্ষ। পুলিশ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্ম মনিটর করছে, যাতে যে কেউ মহিলু‌ক্ত ঘটনা কিংবা চাক্ষুষ প্রমাণ দিয়ে তদন্তকে সহায়তা করতে পারে।

বাংলাদেশের দণ্ডবিধি অনুযায়ী, গ্রুপভিত্তিক মারপিটে মৃত্যু ঘটলে ‘দায়ী হ’তে পারে—‘দায়িত্বপূর্ণ হত্যা’ (শাস্তি সর্বোচ্চ ১০ বছর) ও ‘দাঙ্গা’ (সর্বোচ্চ ২ বছর) ধারায় মামলা হয়। দোষী সাব্যস্ত হলে সোহান ও সামিদের উল্লেখযোগ্য শাস্তি ভোগ করতে হবে।

বান্দর উপজেলায় এই নৃশংস গণপিটুনির ঘটনা একটি স্পষ্ট সংকেত পাঠায়—আমরা যেন স্বীয় হাতে বিচার নেয়ার প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসি। স্থানীয় প্রশাসন ও কমিউনিটি নেতারা neighborhood watch কমিটি গড়ে তুলবেন, যাতে প্রশিক্ষিত পর্যবেক্ষকরা আইনগত ব্যবস্থা নিয়ে দ্রুত পুলিশে খবর দিতে পারে। শতরোগা, প্রতিষ্ঠানগুলো জনগণকে আইনগত অধিকার ও কর্তব্য সম্পর্কে কর্মশালা ধারাবাহিকভাবে পরিচালনা করবে।

শেষ পর্যন্ত, নারায়ণগঞ্জের এই দুর্ঘটনা থেকে শিক্ষা নেয়া জরুরি: সমাজের নিরাপত্তা এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে আইনের শাসনের মধ্য দিয়ে, পুলিশের দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে এবং সচেতন নাগরিক অংশগ্রহণের মাধ্যমে। এই ত্রিমুখী প্রচেষ্টাই একমাত্র পথ যে গণপিটুনির নৃশংস চক্র ভাঙবে এবং প্রতিটি ব্যক্তির মর্যাদা ও অধিকার রক্ষা পাবে

                                                                                                                              click to claim

e2

 

Related Posts

The Day Bangladesh Rose: July 1 Uprising That Shook a Nation

A detailed report on the July 1, 2024 uprising in Bangladesh that began as a student protest over job quotas and evolved into a nationwide movement, ending in a historic political shift. Published July 1, 2025.

Rising Dengue Cases in Bangladesh: 42 Deaths and Nearly 10,000 Hospitalized in 2025

Bangladesh reports 42 dengue deaths and nearly 10,000 hospitalizations in 2025 as the outbreak spreads beyond Dhaka. Health experts urge immediate action to prevent another national crisis.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

You Missed

The Day Bangladesh Rose: July 1 Uprising That Shook a Nation

  • By Chris
  • July 1, 2025
  • 2 views
The Day Bangladesh Rose: July 1 Uprising That Shook a Nation

Rising Dengue Cases in Bangladesh: 42 Deaths and Nearly 10,000 Hospitalized in 2025

  • By Chris
  • June 30, 2025
  • 14 views
Rising Dengue Cases in Bangladesh: 42 Deaths and Nearly 10,000 Hospitalized in 2025

30 Charged in Abu Sayed Murder: Justice Process Begins Under ICT in 2025

  • By Chris
  • June 30, 2025
  • 36 views
30 Charged in Abu Sayed Murder: Justice Process Begins Under ICT in 2025

July Charter 2025 in Limbo as Political Talks Stall Over Key Reforms

  • By Chris
  • June 30, 2025
  • 53 views
July Charter 2025 in Limbo as Political Talks Stall Over Key Reforms

Iran Strongly Condemns Former US President Trump’s Claim of Saving Khamenei in 2025, Calls Remarks Disrespectful

  • By Chris
  • June 28, 2025
  • 69 views
Iran Strongly Condemns Former US President Trump’s Claim of Saving Khamenei in 2025, Calls Remarks Disrespectful

4 killed, 14 injured in bus-truck collision on Dhaka-Mawa Expressway

  • By Chris
  • June 28, 2025
  • 53 views
4 killed, 14 injured in bus-truck collision on Dhaka-Mawa Expressway