
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও সিনিয়র স্থায়ী কমিটি সদস্যরা গুলশানের বাসভবনে দলের চেয়ারপারসনকে শুভেচ্ছা জানিয়ে পুনর্মিলনীর আনন্দ প্রকাশ
ঈদ-উল-আযহা উপলক্ষে শনিবার সন্ধ্যায় গুলশানের সরকারি বাসায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে কেন্দ্রীয় স্থায়ী কমিটির একটি বড় দল সাক্ষাৎ করে। দীর্ঘ মাসের বাসা-বন্দি জীবন, কারাবন্দি ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর এই পুনর্মিলনী বিএনপি নেতাদের জন্য এক আনন্দঘন মুহূর্ত হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, “আজকের এই মিলন আমাদের জন্য দারুণ উল্লাসের। জাতির নেত্রী ও আমাদের চারপাশের অনুপ্রেরণার উৎস খালেদা জিয়ার মুখোমুখি দেখা পেয়ে আমরা সত্যিই অনেক облегчিত।”
মূল অনুষ্ঠানের আগে মাগরিব নামাজের পর কেন্দ্রীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যরা ছোট ছোট গ্রুপে নিয়ে খালেদা জিয়ার আবাসে প্রবেশ করেন। স্বাস্থ্যবিধি মেনে এবং কোভিড-১৯ পরবর্তী সতর্কতা বজায় রেখে এ সাক্ষাৎ সম্পন্ন হয়। উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র স্থায়ী কমিটি সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেইন, যমীর উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল ময়ীন খান, সালাহউদ্দিন আহমেদ, সেলিমা রহমান, হাফিজ উদ্দিন আহমেদ ও এ জেড এম জাহিদ হোসেন। এছাড়া দলের ভাইস-চেয়ারপারসন মোহাম্মদ শহজাহান, এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন এবং আব্দুল আওয়াল মিন্টু এবং উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আবদুল হালিম ও মেজর জেনারেল (অব.) ফজলে এলাহী আকবরও উপস্থিত ছিলেন।
সাক্ষাতের পর সাংবাদিকদের জানাতে গিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, “বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে আমাদের নেত্রীকে দীর্ঘদিন ধরে বাড়ি ও দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে রাখা হয়েছিল। সে সময়ে সাধারণ নেতা-কর্মী তাঁর সান্নিধ্যে আসতে পারিনি। তবে এখন ঘরে ফিরে এসে ঈদ উপলক্ষে আমরা তাঁকে দেখতে পেয়ে অভিভূত।” তিনি আরো বলেন, “খালেদা জিয়ার দৃঢ় মানসিকতা এবং গণতন্ত্রের প্রতি অটল বিশ্বাস দেখে আমরা নতুন করে বাংলাদেশি রাজনীতিতে নতুন করে প্রাণ সঞ্চারিত হচ্ছে।”
মির্জা ফখরুল আরও উল্লেখ করেন, “খালেদা জিয়া আমাদের দলের মূল চালিকাশক্তি। তাঁর নেতৃত্বে বিএনপি অসংখ্য নির্বাচন জয়ের স্বাক্ষর রেখে এসেছে। দেশের রাজনৈতিক परिदৃশ্যেও العديد গুণগত পরিবর্তন এনে দেশে দুইদলীয় ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করেছেন তিনি।” তিনি বলেন, “আজ তাঁকে দেখতে এসে আমরা নতুন উদ্যমে ভরপুর হয়েছি। আমাদের পরিকল্পনা ও কৌশল নির্ধারণে তাঁর পরামর্শ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে এবং আগামী প্রজন্মের নেতাদের জন্য তাঁর উদাহরণ সবসময় নির্দেশিকাস্বরূপ থাকবে।”
এসময় সাংবাদিকদের প্রশ্ন করা হয়, জাতীয় নির্বাচন ও রাজনৈতিক অগ্রণী কৌশল নিয়ে আলোচনা হয়েছে কি না। মির্জা ফখরুল বিনয়পূর্ণভাবে এড়িয়ে দিয়ে বলেন, “রাজনৈতিক আলোচনা অভ্যন্তরীণ বৈঠকেই হবে। আজকের মূল উদ্দেশ্য ছিল নেত্রীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানানো এবং তাঁর সুস্থতা কামনা করা।” তিনি নিশ্চিত করেন, দলীয় নীতি-নির্ধারণী সভা শীঘ্রই অনুষ্ঠিত হবে, যেখানে নির্বাচনী ইশতেহার, জোট-বান্ধবী প্রক্রিয়া ও সংগঠনসংশ্লিষ্ট বিষয়ের ব্যাপারে বিস্তারিত ভাবনা-চিন্তা উপস্থাপন করা হবে।
সাক্ষাত শেষে দলের অন্যতম সিনিয়র নেতা খন্দকার মোশাররফ হোসেইন বলেন, “এ ধরনের পুনর্মিলনী দলকে ঐক্যবদ্ধ করে, ভবিষ্যতের কর্মপরিকল্পনাকে সুসংহত করে। নেত্রীর সঙ্গে কথা বলে মন ভালো হয়ে গেছে। আমরা যা বলবো, সেটি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে তাঁর আশীর্বাদ ও নিদান আমাদের পথপ্রদর্শক হবে।” এছাড়া সেলিমা রহমান বলেন, “রাজনীতির উত্থান-পতনের মাঝে খালেদা জিয়ার স্থিতিস্থাপক মনোভাব আমাদের দলের জন্য সবচেয়ে বড় ধন।”
দলের ভাইস-চেয়ারপারসন মোহাম্মদ শহজাহান জানান, “ঈদ-উল-আযহার এই পুনর্মিলনী শুধু পারিবারিক বা সামাজিক নয়, রাজনৈতিক ঐক্যেরও প্রতীক। জাতীয় রাজনীতিতে বিএনপির জায়গা অটুট রাখতে এখান থেকে আমাদের নানান ভাবনা-চিন্তা বাস্তবে পরিণত হবে।” মেজর জেনারেল (অব.) ফজলে এলাহী আকবর বলেন, “স্বাস্থ্যের উন্নতি হয়েছে তা আমাদের চোখে স্পষ্ট। দলের নেত্রীর গভীর রাজনৈতিক অন্তর্দৃষ্টি রাজনীতির আঙিনায় নতুন শক্তি যোগাবে।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই ঈদ পুনর্মিলনী বিএনপির অভ্যন্তরীণ সংগঠনকে শক্তিশালী করবে এবং ভোটারদের মধ্যে পুনরুজ্জীবন ঘটাবে। তারা মন্তব্য করছেন, “খালেদা জিয়ার পুনরুদ্ধার এবং উজ্জীবিত উপস্থিতি দলীয় কর্মীদের মোবাইলাইজ করার ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রাখবে।” কিছু বিশ্লেষক বলেন, “গঠনতন্ত্র ও নির্বাচনী কৌশল নির্ধারণে তার পরামর্শ একান্ত প্রয়োজন। বিশেষ করে তার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা দলকে শিক্ষা দেবে ভবিষ্যতে কীভাবে অবিচ্ছিন্নভাবে রাজনৈতিক সংগ্রাম চালাতে হয়।”
অন্যদিকে, দলীয় কার্যক্রমে অংশ নেওয়া একাধিক নেতা-কর্মী সোশ্যাল মিডিয়ায় হাসি হেসে পুনর্মিলনীর ছবি শেয়ার করছেন, যেখানে তারা লিখেছেন “বিরল মুহূর্ত” ও “প্রেরণার উৎস”। তারা মনে করছেন, দীর্ঘদিন পর নেত্রীর সঙ্গে দেখা মানে বিএনপির কর্মীরা পুনরায় অনুপ্রাণিত হয়েছেন এবং দলীয় স্লোগান কিন্তু নতুন প্রেরণা নিয়ে সামনে এগোবে।
আগামী দিনের কর্মপরিকল্পনা সম্পর্কে মির্জা ফখরুল বলেন, “চেয়ারপারসনের দিকনির্দেশনায় শিগগিরই আমরা জাতীয় নীতি-নির্ধারণী সভা ডেকব। সেখানে নির্বাচনী প্রস্তুতি সম্পন্ন হবে। এছাড়া ইউনিয়ন, থানা পর্যায়ে কর্মী-সভা আয়োজন করে Grassroots লেভেলে প্রস্তুতি জোরদার করা হবে।”
এভাবে ঈদ-উল-আযহার আনন্দঘন পুনর্মিলনী বিএনপির উচ্চপর্যায়ের নেতা-কর্মীদের মনে নতুন উদ্দীপনা সঞ্চার করেছে এবং চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতায় দলের ভেতরে ঐক্য ফেরেছে। খালেদা জিয়ার সুস্থতা এবং রাজনৈতিক সক্রিয়তা শুভসংকেত এনে দেবে বলে দলীয় নেতারা আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন, যা আগামী নির্বাচন এবং জাতীয় রাজনীতির দৃষ্টিভঙ্গিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।