
উয়েফা কনফারেন্স লিগ জয়ের মাধ্যমে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ও ইউরোপা লিগের পর তৃতীয় ইউরোপীয় শিরোপা ঘরে তুলল চেলসি, প্রথমবারের মতো ইউরোপের তিনটি প্রধান ক্লাব শিরোপা জয়ী ক্লাব হিসেবে ইতিহাসে নাম লেখাল।
২৯ মে ২০২৫, রোকলা, পোল্যান্ড:
ইউরোপীয় ক্লাব ফুটবলের ইতিহাসে আরেকটি স্বর্ণালি অধ্যায় যুক্ত করল ইংলিশ ক্লাব চেলসি। উয়েফা কনফারেন্স লিগ ২০২৫ এর ফাইনালে স্প্যানিশ ক্লাব রিয়াল বেতিসকে ২-০ ব্যবধানে হারিয়ে কনফারেন্স লিগের শিরোপা জিতে নেয় চেলসি। এই জয়ের মাধ্যমে ক্লাবটি ইউরোপের তিনটি প্রধান প্রতিযোগিতা—উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ, ইউরোপা লিগ এবং কনফারেন্স লিগ—জয় করার গৌরব অর্জন করে।
চেলসির এই জয় শুধু একটি শিরোপা জয় নয়, বরং ক্লাব ইতিহাসে নতুন মাইলফলক। এর মধ্য দিয়ে তারা ইউরোপীয় ক্লাব ফুটবলের প্রথম ক্লাব হিসেবে এই তিনটি শিরোপা ঘরে তোলে, যা ফুটবল বিশ্লেষকদের মতে, একটি যুগান্তকারী ঘটনা।
🔹 প্রথমার্ধে আধিপত্য প্রতিষ্ঠা
ম্যাচের শুরু থেকেই চেলসি তাদের আক্রমণাত্মক কৌশল অব্যাহত রাখে। শুরুতে দু’দলের মধ্যেই চলছিল বল দখলের লড়াই। তবে ২০ মিনিটের পর থেকেই চেলসি ধীরে ধীরে ম্যাচে আধিপত্য বিস্তার করতে থাকে। ২৭তম মিনিটে চেলসির ফরাসি ফরোয়ার্ড ক্রিস্টোফার এনকুনকু একটি দুর্দান্ত গোল করেন। মিডফিল্ড থেকে স্টার্লিংয়ের নিখুঁত পাসে বল পেয়ে এনকুনকু ডি-বক্সে ঢুকে জোরালো শটে বল পাঠান জালে।
গোল পাওয়ার পর আরও আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠে ব্লুজরা। মাঝমাঠে কাই হাভার্টজ ও কনর গ্যালাঘার বারবার আক্রমণের সূচনা করেন। প্রথমার্ধে রিয়াল বেতিস কিছু সুযোগ তৈরি করলেও তা কাজে লাগাতে ব্যর্থ হয়।
🔹 দ্বিতীয়ার্ধে ব্যবধান দ্বিগুণ
দ্বিতীয়ার্ধে রিয়াল বেতিস আক্রমণাত্মকভাবে শুরু করলেও চেলসির রক্ষণভাগ ছিল সংগঠিত ও মজবুত। থিয়াগো সিলভা ও বদলি খেলোয়াড় কোলওয়িল দারুণভাবে সামলান প্রতিপক্ষের আক্রমণ।
৬৫তম মিনিটে ব্যবধান দ্বিগুণ করে চেলসি। এ সময় মিডফিল্ডার এনজো ফার্নান্দেজ বক্সের বাইরে থেকে একটি দুর্দান্ত থ্রু পাস দেন, যা কাই হাভার্টজ নিখুঁত ফিনিশিংয়ে গোলে পরিণত করেন। ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে যাওয়ার পর থেকেই চেলসি ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরি নিজেদের দখলে নিয়ে নেয়।
🔹 ম্যাচের নায়ক এনকুনকু
ক্রিস্টোফার এনকুনকু এই ম্যাচে ছিলেন উজ্জ্বলতম তারা। গোল করার পাশাপাশি প্রতিপক্ষ ডিফেন্সকে বারবার ব্যতিব্যস্ত করে তোলেন। পুরো ম্যাচে তার পাস, দৌড় এবং উপস্থিতি দলকে আক্রমণে এগিয়ে রাখে। ম্যাচ শেষে তাকে “ম্যান অব দ্য ম্যাচ” হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
🔹 কোচের প্রশংসা
ম্যাচ শেষে চেলসির কোচ মোরিসিও পোচেটিনো বলেন,
“এই দলটি আমার গর্ব। প্রতিটি খেলোয়াড় তাদের সর্বোচ্চ দিয়েছে। আমরা এই শিরোপা জয়ের জন্য অনেক পরিশ্রম করেছি। এটি শুধু একটি ম্যাচ নয়, এটি একটি ইতিহাস।”
তিনি আরও বলেন, “চেলসির ভবিষ্যৎ এই তরুণদের হাতেই নিরাপদ। আজকের জয় ক্লাবের উন্নতির প্রমাণ।”
🔹 রিয়াল বেতিসের লড়াই
রিয়াল বেতিস এই ম্যাচে চেষ্টার কোনো ত্রুটি রাখেনি। তবে চেলসির মতো পরিপক্ক ও অভিজ্ঞ দলের বিপক্ষে তারা শেষ পর্যন্ত দমে যায়। ম্যাচ শেষে বেতিস কোচ বলেন,
“আমরা অনেক কিছু শিখেছি। ভবিষ্যতে এই অভিজ্ঞতা কাজে লাগবে।”
🔹 সমর্থকদের উল্লাস
চেলসির এই ঐতিহাসিক জয়ে সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক উল্লাস লক্ষ্য করা যায়। লন্ডনের স্ট্যামফোর্ড ব্রিজে বড় পর্দায় ম্যাচ দেখার আয়োজন করা হয়, যেখানে হাজারো সমর্থক চ্যাম্পিয়নের উল্লাসে ফেটে পড়ে। সামাজিক মাধ্যমে ভক্তরা #ChelseaChampions ট্রেন্ড করে।
🔹 ইউরোপীয় ফুটবলে নতুন রেকর্ড
এই জয়ের ফলে চেলসি ইউরোপীয় ফুটবলে অনন্য এক মাইলফলক স্থাপন করল:
-
UEFA Champions League: ২০১২, ২০২১
-
UEFA Europa League: ২০১৩, ২০১৯
-
UEFA Conference League: ২০২৫
এই তিনটি প্রতিযোগিতায় শিরোপা জয় করা একমাত্র ক্লাব হিসেবে চেলসি নিজেদের অবস্থান আরও মজবুত করলো।
🔹 সামনে কী?
এই জয়ের মাধ্যমে ২০২৪-২৫ মৌসুমে ট্রফি জয়ের মাধ্যমে চেলসি নিজেদের পুনরুদ্ধার করলো। কোচ ও ক্লাব ম্যানেজমেন্ট এখন নতুন মৌসুমের জন্য প্রস্তুতি শুরু করবে। গ্রীষ্মের ট্রান্সফার উইন্ডোতে আরও তারকা খেলোয়াড় যুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে ক্লাবের।