
ইশরাক হোসেনকে শপথ না পড়ানোর বিষয়ে দাখিল হওয়া রিটের আদেশ আজ হাইকোর্ট থেকে ঘোষণা করা হবে।
মহানগর ডেস্ক
প্রকাশিত: ২১ মে ২০২৫ |
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র পদে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে শপথ না পড়ানোর নির্দেশনা চেয়ে দায়ের করা রিট আবেদনের শুনানি শেষ হয়েছে। এ বিষয়ে আজ বুধবার (২১ মে) হাইকোর্ট আদেশ দেবেন। বিচারপতি মো. আকরাম হোসেন চৌধুরী এবং বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর দ্বৈত বেঞ্চ এ আদেশ দেবেন বলে মঙ্গলবার (২০ মে) বিকেলে শুনানি শেষে জানানো হয়।
এই রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ হোসেন, রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মাহফুজুর রহমান মিলন, এবং ইশরাক হোসেনের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন।
রিট আবেদনের পটভূমি
১৪ মে ২০২৫ তারিখে ঢাকার একজন নাগরিক মো. মামুনুর রশিদ হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় একটি রিট আবেদন দায়ের করেন। তিনি ঢাকার দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বাসিন্দা। রিটে দাবি করা হয়, নির্বাচন কমিশনের (ইসি) গেজেট অনুযায়ী ইশরাক হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করা হলেও, তাকে শপথ গ্রহণ করতে দিলে তা হবে বেআইনি ও সংবিধানবিরোধী।
রিট আবেদনে আরও উল্লেখ করা হয় যে, যিনি এই রায় দিয়েছেন— অর্থাৎ ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ এবং নির্বাচনি ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. নুরুল ইসলাম, তিনি তার এখতিয়ার অতিক্রম করে রায় দিয়েছেন। সেই কারণে বিচারকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও চাওয়া হয়েছে আবেদনে।
২০২০ সালের নির্বাচন এবং পরবর্তী রায়
২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপস বিএনপির প্রার্থী ইশরাক হোসেনকে প্রায় পৌনে দুই লাখ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেন। এরপর তাপস মেয়র হিসেবে শপথ গ্রহণ করে দায়িত্ব পালন শুরু করেন।
তবে নির্বাচনের ফলাফলকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে নির্বাচনি ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন ইশরাক হোসেন। দীর্ঘ চার বছর পর গত ২৭ মার্চ ২০২৫ তারিখে ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ ও নির্বাচনি ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. নুরুল ইসলাম এক রায়ে শেখ তাপসের বিজয় বাতিল করে ইশরাক হোসেনকে বৈধ মেয়র হিসেবে ঘোষণা দেন।
এই রায়ের ভিত্তিতে ২২ এপ্রিল নির্বাচন কমিশন আইন মন্ত্রণালয়ের কাছে গেজেট প্রকাশ সংক্রান্ত পরামর্শ চায়। এরপর ২৭ এপ্রিল নির্বাচন কমিশন আনুষ্ঠানিকভাবে গেজেট প্রকাশ করে, যেখানে বলা হয়— ইশরাক হোসেন হচ্ছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বৈধ মেয়র।
রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রতিক্রিয়া
ইশরাক হোসেনকে মেয়র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার পর থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় বিএনপির নেতাকর্মীরা অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন। তারা দাবি করছেন, নির্বাচন কমিশন যখন গেজেট প্রকাশ করেছে, তখন আর বিলম্ব না করে তাকে শপথ গ্রহণ করানো উচিত। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ বলছে, এই রায় একটি পরিকল্পিত রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র এবং আদালতের ওপর প্রভাব খাটানোর চেষ্টা।
বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, “সরকারি প্রভাবের কারণে গণতান্ত্রিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে ইশরাককে।” এদিকে, আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, “আদালতের রায় ও নির্বাচন কমিশনের পদক্ষেপে এক ধরনের আইনি জটিলতা তৈরি হয়েছে, যা তদন্ত করে সমাধান করতে হবে।”
আইনি জটিলতা ও বিতর্ক
আইন বিশ্লেষকরা বলছেন, একটি নির্বাচনের চার বছর পর ট্রাইব্যুনালের এমন রায় দেওয়া অত্যন্ত বিরল। এর ফলে সিটি করপোরেশনের প্রশাসনিক কাঠামো, বাজেট এবং চলমান প্রকল্পগুলোর ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
যদিও নির্বাচন কমিশনের গেজেট প্রকাশ একটি প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত, তবে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করার জন্য শপথ গ্রহণ অপরিহার্য। আর সেই জায়গাতেই আইনি বিরোধ তৈরি হয়েছে, যেটা আজকের হাইকোর্টের আদেশের মাধ্যমে একটি দিকনির্দেশনা পেতে পারে।
আজকের হাইকোর্টের আদেশের গুরুত্ব
হাইকোর্ট আজ যে আদেশ দেবে, তা শুধু ইশরাক হোসেনের মেয়র পদে বসা না-বসা নির্ধারণ করবে না, বরং এটি বাংলাদেশের স্থানীয় সরকারের নির্বাচনি ট্রাইব্যুনালের ক্ষমতা এবং নির্বাচন কমিশনের ভূমিকার ওপর গুরুত্বপূর্ণ নজির তৈরি করতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, “এই আদেশে স্পষ্ট হয়ে যাবে, আদালতের রায়ের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশনের গেজেট কতটা বাধ্যতামূলক এবং একজন ব্যক্তি আদলতের নির্দেশে নির্বাচিত হলেও শপথ ছাড়াই কার্যকর হতে পারবেন কিনা।”
উপসংহার
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচন নিয়ে চলমান এই আইনগত বিতর্ক রাজনৈতিক, প্রশাসনিক ও আইনি অঙ্গনে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। আজকের হাইকোর্টের রায় কেবল একটি ব্যক্তি বা একটি রাজনৈতিক দলের জন্য নয়, বরং দেশের নির্বাচনি প্রক্রিয়া ও গণতন্ত্রের ভবিষ্যতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে।