
ঢাকায় সেনাবাহিনীর বিশেষ অভিযানে হিটলু বাবু গ্যাং-এর ১০ সদস্য গ্রেফতার, মাটিকাটা এলাকা থেকে উদ্ধার অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারু

ঢাকা, ২০ মে: রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট থানাধীন মাটিকাটা এলাকায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি বিশেষ অভিযানে ‘হিটলু বাবু গ্যাং’ নামে কুখ্যাত একটি সন্ত্রাসী গ্যাংয়ের ১০ জন সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অভিযানে উদ্ধার করা হয়েছে চারটি অবৈধ স্বয়ংক্রিয় আগ্নেয়াস্ত্র ও ২৮ রাউন্ড তাজা গুলি। মঙ্গলবার ভোরে পরিচালিত এই বিশেষ অভিযানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সেনাবাহিনীর সাহসী ভূমিকাকে প্রশংসা করছে সাধারণ মানুষ।
সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ভাষানটেক সেনা ক্যাম্পের ৮৬ স্বতন্ত্র সিগন্যাল ব্রিগেড গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রাত ২টা থেকেই অভিযান শুরু করে। মাটিকাটা এলাকার বেশ কয়েকটি স্থানে একযোগে অভিযান চালানো হয়। ভোর ৫টার দিকে এক জায়গায় অভিযানে অংশ নেওয়া সেনা সদস্যরা গ্যাং সদস্যদের সঙ্গে মুখোমুখি হন। ওই সময় গ্যাং সদস্যরা গ্রেফতার ঠেকাতে টহল দলের ওপর আক্রমণের চেষ্টা করে। আত্মরক্ষার্থে সেনা সদস্যরা সতর্কতামূলকভাবে ফাঁকা গুলি ছোড়ে এবং সফলভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
অভিযানে গ্যাং সদস্যদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে চারটি আধুনিক ও অবৈধ স্বয়ংক্রিয় আগ্নেয়াস্ত্র, ২৮ রাউন্ড তাজা গুলি এবং কয়েকটি মোবাইল ফোন, সিমকার্ড ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে ব্যবহৃত বিভিন্ন সরঞ্জাম। সেনাবাহিনী জানিয়েছে, উদ্ধারকৃত অস্ত্রগুলো সীমান্ত এলাকা থেকে অবৈধভাবে চোরাচালানের মাধ্যমে ঢাকায় আনা হয়েছিল।
‘হিটলু বাবু গ্যাং’ রাজধানীর মাটিকাটা, ভাষানটেক, মিরপুরসহ আশপাশের এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে চাঁদাবাজি, মাদক কারবার, জমি দখল, দস্যুতা এবং ভয়ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে ত্রাস সৃষ্টি করছিল। গ্যাংয়ের নেতৃত্বে রয়েছে হিটলু বাবু নামে এক ব্যক্তি, যিনি বর্তমানে পলাতক রয়েছেন। গ্রেফতার হওয়া সদস্যদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে হিটলু বাবুকে ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের ভাষ্যমতে, এই গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্যে সাধারণ মানুষ বহুদিন ধরে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছিল। কেউ প্রতিবাদ করলে তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হতো বা ভয়ভীতি দেখানো হতো। একাধিকবার থানায় অভিযোগ করেও কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপে এলাকাবাসী স্বস্তি প্রকাশ করেছে।
একজন স্থানীয় দোকানদার বলেন, “হিটলু বাবু গ্যাং আমাদের ব্যবসা থেকে চাঁদা নিত, না দিলে হুমকি দিত। আমরা পুলিশের কাছেও গিয়েছি, কিন্তু লাভ হয়নি। এখন সেনাবাহিনী এসে তাদের ধরে ফেলেছে, এতে আমরা অনেকটাই নিরাপদ বোধ করছি।”
সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই গ্যাংয়ের সদস্যরা অত্যন্ত সুসংগঠিত এবং প্রযুক্তি-সচেতন। তারা বিভিন্ন নামে সিমকার্ড ব্যবহার করে যোগাযোগ করত এবং অপরাধমূলক কার্যক্রম চালাত। গ্রেফতার হওয়া সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদ করে আরও তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে এবং সেই অনুযায়ী রাজধানীর অন্যান্য স্থানে অভিযান চালানো হবে।
আইনশৃঙ্খলা বিশেষজ্ঞদের মতে, রাজধানীতে গ্যাং কালচারের বিস্তার রোধে গোয়েন্দা তৎপরতা, তথ্যভিত্তিক অভিযান এবং স্থানীয় জনগণের সহায়তা অপরিহার্য। বিশেষ করে মাদক ও অস্ত্র চোরাচালান রোধে সেনাবাহিনী ও পুলিশের সমন্বয়ে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার প্রয়োজন।
সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়, দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে তারা নিয়মিত এ ধরনের অভিযান পরিচালনা করবে। সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও অবৈধ অস্ত্র ব্যবসার সঙ্গে জড়িত কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না।
এই অভিযানে সেনাবাহিনীর পেশাদারিত্ব ও সাহসিকতার প্রশংসা করেছে সচেতন মহল। অনেকে মনে করছেন, এমন অভিযান চলতে থাকলে রাজধানীসহ সারাদেশের মানুষ অনেক বেশি নিরাপদ ও নিশ্চিন্ত জীবনযাপন করতে পারবে