
গালের প্রথম টেস্টের প্রথম দিনে শান্ত 101* ও মুশফিকুর 86* রানে বিকশিত হলো টাইগারদের অপরাজিত জুটি
২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি–মার্চের পর প্রথমবার শ্রীলঙ্কায় সাদা পোশাকের ক্রিকেটে শতরানের দেখা পেলেন নাজমুল হোসেন শান্ত; গালে অনুষ্ঠিত দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজের প্রথম ম্যাচের প্রথম দিনে অপরাজিত ১০১ রানের ইনিংসে ১৮ মাস পর রেকর্ড গড়েন তিনি। ইনিংসের উদ্বোধনী ধাক্কা সামলে খুব দ্রুতই থিতু হতে না পারলেও, শান্তের সেঞ্চুরির পর মুশফিকুর রহিমের ব্যাট থেকে ৮৬ রানের অসাধারণ প্রত্যাবর্তনে বাংলাদেশের সংগ্রহ পৌঁছায় ৩ উইকেটে ২৩৪ রান, দুপুর বিরতির আগেই.
গালের গ্রাউন্ডে টস হেরে প্রথমে ব্যাট করতে নামা বাংলাদেশ দল মধ্যবর্তী প্রোটিয়ার নির্ভরযোগ্য বোলারদের সামনে ব্যাটিংয়ে লড়াই শুরু করেছিল। সাদমান ইসলাম (২৯) ও মুমিনুল হক (৪৫) যথাক্রমে ৩৩ ও ৪৫ রানের ইনিংস খেলেও থমকে দেন প্রজশন ব্রথার্স। তাদের পরেই শান্ত-মুশফিক জুটির দিনে সূর্যোদয়ের মতো উজ্জ্বল আলো ছড়ায় দলের বোল্ড সামনে; তারা তুলনামূলক সহজ প্রতিপক্ষ হয়েও লঙ্কান স্পিন আক্রমণ অবসানের আগ পর্যন্ত পুঁজি বাড়িয়ে নিয়ে যান ।
নাজমুল হোসেন শান্ত প্রথম থেকেই আক্রমণে থাকলেও, ৫০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করতে তাকে খেলতে হয় ৭৩ বল । পরের ২৪ বলের মধ্যেই ২৭ রান বাড়িয়ে শতরান। তার ইনিংসের মূল আকর্ষণ ছিল লম্বা অফ সাইডে গভীর ত্রিস্তরীয় বিকাশ, যেখানে আউটসুইং নিয়ে এসেছে মেরুদণ্ড-দাঁড় করা রেকর্ডের ছোঁয়া ।
মুশফিকুর রহিমের ব্যাটিং ছিল আলাদা অধ্যায়—প্রচণ্ড ভারসাম্যহীন লঙ্কান উইকেটে ৮৬ বলে অপরাজিত থেকে ৮৬ রান তোলায় তার মানসিক দৃঢ়তা ও ফ্লাইটেড শটের মিশ্রণ স্পষ্টেই ফুটে উঠল । বিশেষ করে ৫০ রানের মাইলফলকে পৌঁছানোর পথে ৪ চার ও ২ ছক্কায় গড় উদযাপন বলে জানান দিলেন, যে বিশ্বমানের মুশফিকের অস্তিত্ব এখনও অক্ষুণ্ণ ।
বাংলাদেশের প্রথম দিনজুড়ে দারুণ সংগ্রহ গড়ে ঢাকা পড়া রক্ষণাত্মক ড্রেসিংরুমের পরিকল্পনাই ছিল শেখার বিষয়। মধ্যাহ্ন বিরতির আগে দুশো ছাড়িয়ে যাওয়া সংগ্রহ শেষ দিনে স্পিন আক্রমণ ঠেকানোর জন্য জৈবিক সুবিধা দেবে; গালের উইকেট দিনের পর দিন ধীরে ভেঙে পড়লেও এই স্কোরবোর্ডই দ্বিতীয় দিনে চাপ সৃষ্টি করবে।
টাইগারদের শীর্ষতম সাফল্য হিসেবে ধরা হচ্ছে শান্তের শতরানের পর বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা টেস্ট সিরিজের ইতিহাসে তিনজন ব্যাটসম্যানের সেঞ্চুরির সম্মিলন: মুশফিক (১৩৪৬), আশরাফুল (১০৯০) ও মুমিনুল (১০৭০) এর পর শান্ত হলেন চতুর্থ যার নাম এই তালিকায় যুক্ত হলো। এছাড়া, কোনো দেশের বিরুদ্ধে সাদা পোশাকে প্রথম ডাবল সেঞ্চুরির স্বীকৃত ফল বাংলাদেশের পক্ষেই, ২০১৩ সালে গলের মাটিতে মুশফিকের ২০০ রানের সুবর্ণ স্মৃতি আজো ফ্রেমে ঝলমিক চোখে ।
প্রথম দিনের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল গালের আকাশে বিরতি-বিরতিতে বৃষ্টি; দুপুরে সামান্য নয়, মৃদু বৃষ্টি শুরু হওয়ায় অধিনায়ক শান্ত ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে আলোচনা করে ২০ মিনিটের ছুটি নেন, যা ব্যাটসম্যানদের ঘুরে দাঁড়াতে মানসিকভাবে সহায়তা করে । তাই দ্বিতীয় সেশনেও ব্যাটিংয়ের দৃঢ়তা ধরে রাখতে সফল হন দলীয় দুই কলাম্নিস্ট।
গতবারের মতো শ্রীলঙ্কা সফরে ব্যর্থতার স্মৃতি থেকে শিক্ষা নিয়ে এই স্কোরবোর্ড উন্নতি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের পরবর্তী স্তরে উত্তরণের ইঙ্গিত দিচ্ছে। সামনের দিনগুলোতে বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংস ও শ্রীলঙ্কার প্রতিক্রিয়া যাই হোক না কেন, প্রথম দিনের এই ভূমিকা টাইগারদের আত্মবিশ্বাসী করছে ।
দ্বিতীয় দিন শুরুতেই বাকি ব্যাটসম্যানদের দ্রুত উইকেট সংখ্যা বাড়িয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে লঙ্কান দলের, তবে শান্ত-মুশফিকের প্যাশন ও দৃঢ়তার কাছে যে বিস্ফোরিত হতে পারে তারা, তা অস্বীকার করা যাবে না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নির্দিষ্ট স্কোর পৌঁছে দেওয়ার পরই বাংলাদেশের গেম প্ল্যান হবে লঙ্কানাদের উপরে নির্ভরতা বাড়িয়ে এক্সপেরিমেন্ট চালানো—এই দুই ব্যাটসম্যানের সাফল্য সেই কৌশলকে সাফল্যের পথে পরিচালিত করতে পারে ।
পরিশেষে, ১৮ মাস পর শ্রীলঙ্কার মাটিতে শতরান করেই যে নাজমুল হোসেন শান্ত আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজের প্রজ্ঞা পুনরায় প্রমাণ করলেন, তার প্রমাণ আজ গালের প্রথম দিনের সূর্যোদয়ে উজ্জ্বল আলোয় ভাসছে; আর তার পাশে মুশফিকুর রহিমের ব্যাটে ফুটে ওঠা অচঞ্চল অবিচলিত দৃঢ়তা, বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেটে ভবিষ্যতের আশা ও সম্ভাবনার নতুন অধ্যায় লিখছে।