
৭৫ ওয়ার্ড জুড়ে ১২ ঘণ্টার টার্গেটের মধ্যে সন্ধ্যা ৯:৩০ নাগাদ সমস্ত বর্জ্য সরানো হয়
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি) এই বছর ঈদ-উল-আযহা উপলক্ষে তাদের ৭৫ ওয়ার্ডের সর্বমোট ১৩৩,৩১৭টি পশু কোরবানি থেকে সৃষ্ট বর্জ্য মাত্র আট ঘণ্টার মধ্যে সম্পূর্ণরূপে মুছিয়ে ফেলেছে। বৃহস্পতিবার, ৬ জুন ২০২৫ সালে দুপুর ১:৪৫ মিনিটে লঞ্চ করা কর্মসূচি রাত ৯:৩০ মিনিটেই শেষ হওয়ায় ডিএসসিসি নিজেই নির্ধারিত ১২ ঘণ্টার সময়সীমা অতিক্রম করে গড়ে তুলেছে নতুন রেকর্ড।
ডিএসসিসি পাবলিক রিলেশন্স অফিসার র্যাশেল রহমান জানিয়েছেন, পশু কোরবানি থেকে উৎপন্ন বর্জ্য—রক্তাক্ত ছাল, হাড়, আশাব্যঞ্জক পচা অংশসহ যে কোনো অর্গানিক উপাদান—প্রাথমিকভাবে ৭৫টি সেকেন্ডারি স্টেশনে আনা হয়। এসব কেন্দ্র থেকে ডাম্প ট্রাকে নিয়ে যাওয়া হয় শহরের দক্ষিণ প্রান্তবর্তী মতুয়াইল স্যানিটারি ল্যান্ডফিল পর্যন্ত, যেখানে সঠিক ভাবে নিষ্পত্তির প্রস্তুতি হচ্ছে। প্রথম দিনের কাজ শেষে প্রায় ১২,০০০ মেট্রিক টন বর্জ্য ইতিমধ্যে ফেলা হয়েছে, যা হিসাবযুক্ত মোট ৩০,০০০ টনের ৪০%।
অগ্রণী সফলতার অন্যতম কারণ ছিল মনোযোগী পরিকল্পনা ও সমন্বয়। র্যাশেল রহমান বলেন, “আমরা ঈদ-উল-আযহা বর্জ্যের প্রকৃতির কথা মাথায় রেখেই আগেই রুট এবং জোন ভিত্তিক টিম ভাগ করে দিয়েছিলাম। প্রতিটি ওয়ার্ডে নির্ধারিত কর্মী এবং ভ্যানে কাজের অগ্রগতি রাতারাতি মনিটরিং হয়েছে, ফলে কেউ পিছিয়ে পড়েনি।”
এই বৃহৎ অপারেশনে মোট ১০,০০০ এর বেশি কর্মী নিয়োজিত ছিলেন। সাঁটল, হ্যান্ড পিকিং, যান-বাহন পরিচালনা থেকে তত্ত্বাবধানে—প্রত্যেকেই সুশৃঙ্খলভাবে পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম পরিচালনায় নিয়োজিত হয়েছিল। প্রতিটি ওয়ার্ডে স্বতন্ত্র তদারকির মাধ্যমে মুখোমুখি সমস্যা সমাধান করতে হয়েছিল।
যন্ত্রপাতি হিসেবে মোবাইল করা হয়েছিল:
-
২০৭টি ডাম্প ট্রাক (প্রতি ট্রাকে ১০ টন বর্জ্য ক্ষমতা)
-
৪৪টি কম্প্যাক্টর (বর্জ্য চাপে ভাঁজ করার জন্য)
-
৩৯টি কনটেইনার ক্যারিয়ার (বাল্ক পরিবহনের জন্য)
-
১৬টি পে-লোডার (ভারী অংশ তোলার জন্য)
-
এবং ২,০৭৯টি ছোটহাতি যানবাহন, যেমন – মিনি টিপার ট্রাক ও মোটরভিত্তিক ত্রি-চাকা অভিযোজিত ছিল সরু ফুটপথ ও গলিতে কাজ করার জন্য।
ডিএসসিসি পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য রক্ষায় আগেই বিতরণ করেছিল:
-
৪৫ টন ব্লিচিং পাউডার,
-
২০৭ ফাইভ-লিটার সেভলন জীবাণুনাশক,
-
১ লাখ ৪০ হাজার বায়োডিগ্রেডেবল ব্যাগ।
DSCC crew members remove sacrificial animal remains and organic debris from public roads and drains during the Eid-ul-Azha post-festival cleanup operation in Dhaka South.
এই উপকরণ দিয়ে বাসিন্দারা রক্তাক্ত স্থান নিত্যদিনেই জীবাণুমুক্ত করার পাশাপাশি পশুর অংশগুলো আলাদা থলে-ব্যাগে রেখে দিয়েছে। ওয়ার্ড অফিসাররা ও এলাকার ধর্মীয় নেতারা ঘরে ঘরে গিয়ে সঠিক কোরবানি পরবর্তী বর্জ্যবিন্যাসের নিয়ম বুঝিয়েছিলেন, যা ঘিঞ্জি দুর্গন্ধ কমিয়ে এনেছে এবং রোগজীবাণু ছড়িয়ে পড়া রোধ করেছে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন প্রশাসক মো. শাহজাহান মিয়া নিজেই মাঠে গিয়ে কাজের অগ্রগতি দেখেছেন এবং কর্মীদের অনুপ্রেরণা জোগিয়েছেন। তিনি বলেন, “কঠিন পরিবেশে গ্রীষ্মের পোড়ানো তাপ ও দুর্গন্ধের মাঝেও আমাদের কর্মীরা অক্লান্ত পরিশ্রম করেছে। তাদের নিষ্ঠা আর জনসাধারণের সহযোগিতা মিলেই আজকের এই অর্জন সম্ভব হয়েছে।”
স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ান উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে বলেন, “শহরকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার আমাদের অঙ্গীকার বাস্তবে রূপ নিল আজ। ডিএসসিসির এই কর্মযজ্ঞ পুরো বাংলাদেশের জন্য অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত।”
ডিএসসিসি জানিয়েছে, দ্বিতীয় ও তৃতীয় দিনে কোরবানির পরেও একই তালে কাজ চালিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি সম্পন্ন। রিজার্ভ টিম ও অতিরিক্ত যন্ত্রপাতি স্ট্যান্ডবাই অবস্থায় রাখা হয়েছে, যাতে যে কোনো মুহূর্তে প্রায়োগিক ব্যাঘাত ছাড়াই অতিরিক্ত বর্জ্য অপসারণ সম্ভব হয়।
এই সফল অপারেশন থেকে পাওয়া শিক্ষাগুলো ব্যবহার করে ভবিষ্যতে বড় উৎসবগুলোতে আরও দ্রুত সাড়া দেয়া যাবে বলে মনে করছে নগর কর্তৃপক্ষ। পরিকল্পিত ডেকেন্দ্রালাইজড সংগ্রহ কেন্দ্র, মিশ্রিত যানবাহন বহর, টেবিলটপ ড্রিল, এবং জনসচেতনতার প্রচার—এসবই রিপ্লিকেটেবল মডেল হিসেবে অন্যান্য পৌরসভাগুলোও অনুসরণ করতে পারবে।
ডিএসসিসির এই রেকর্ড ৮ ঘণ্টার কাজ শুধু সংখ্যা নয়; এটি প্রমাণ করে সম্মিলিত সিদ্ধান্ত, সুশৃঙ্খল বাস্তবায়ন ও নাগরিক সহযোগিতার সম্মিলনেই কোনো কঠিন চ্যালেঞ্জই অতিক্রম করা যায়। ঈদের আনন্দ এখন শান্ত, আর অব্যাহত রাখার জন্য ডিএসসিসি প্রস্তুত প্রতিটি পরবর্তী দিনের কোরবানি পরবর্তী পরিষ্কারের জন্য।