
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকে ১-০ গোলে হারিয়ে ইউরোপা লিগ চ্যাম্পিয়ন টটেনহ্যাম হটস্পার; ব্রেনান জনসনের গোলেই ট্রফি নিশ্চিত
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকে ১-০ গোলে হারিয়ে ইউরোপা লিগের শিরোপা জিতে স্পার্সের দীর্ঘ ট্রফি শূন্যতা শেষ
২০২৫ সালের মে মাসের ২১ তারিখ স্পেনের বিলবাও শহরের সান মামেস স্টেডিয়ামে ফুটবল জগতের এক ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী ছিল। ইউরোপের অন্যতম প্রধান ক্লাব প্রতিযোগিতা, ইউরোপা লিগের ফাইনালে টটেনহ্যাম হটস্পার ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকে ১-০ গোলে হারিয়ে ১৭ বছরের দীর্ঘ ট্রফি শূন্যতার অবসান ঘটাল। ব্রেনান জনসনের একমাত্র গোলে টটেনহ্যামের এই জয় কেবলমাত্র একটি ম্যাচের সাফল্য নয়, বরং এক যুগের সংগ্রামের সার্থকতা।
গোলের সময় এবং ম্যাচের মুহূর্ত
ফাইনালের ৪২তম মিনিটে টটেনহ্যামের ডিফেন্সিভারদের ভুলের সুযোগ নিয়ে বল পেয়ে গোল করেন ব্রেনান জনসন। পাপে মাতার সার থেকে আসা একটি ডিফ্লেক্টেড ক্রস থেকে শট নেওয়ার সময় গোলরক্ষক ও ডিফেন্ডাররা পর্যাপ্ত প্রতিরোধ করতে পারেননি। এই গোল ফাইনালের ভাগ্য নির্ধারণ করে দেয়। পরে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড বেশ কিছুবার আক্রমণ করেও গোল করতে ব্যর্থ হয়। বিশেষ করে টটেনহ্যামের গোলরক্ষক গুগলিয়েলমো ভিকারিও অসাধারণ রক্ষণাত্মক ভূমিকা পালন করে একাধিক বড় সেভ করেন।
ম্যাচের সামগ্রিক চিত্র
দু’দলই রক্ষণাত্মক কৌশল নিয়ে মাঠে নেমেছিল, কারণ উভয়ের পক্ষে বড় ভুল খুব ব্যয়বহুল হতে পারত। ম্যানেজার আঞ্জে পোস্টেকোগলু তার দলকে শক্তিশালী ও সুশৃঙ্খল রাখার ওপর জোর দিয়েছিলেন। টটেনহ্যাম মধ্যমাঠে ইয়েভস বিসসুমার কড়া দাপট ম্যাচের গতি নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। ম্যাচের প্রতিটি মুহূর্তে স্পার্সের খেলোয়াড়রা নিজেদের দায়িত্ব পালন করেছে এবং সতীর্থদের পাশে থেকে লড়াই করেছে।
অন্যদিকে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড কিছু আক্রমণ চালিয়েছিল, বিশেষ করে ম্যাচের শেষের দিকে, কিন্তু টটেনহ্যাম ডিফেন্স ভাঙতে পারেনি। তাদের রক্ষণকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে গিয়ে ইউনাইটেডের আক্রমণাত্মক পরিকল্পনায় অসংগতি দেখা যায়। ম্যাচের চাপে ভুলও ছিল বেশ কয়েকটি, যা স্পার্সের জয়কে সহজতর করেছিল।
টটেনহ্যামের দীর্ঘ ট্রফি শূন্যতা শেষ
২০০৮ সালের পর টটেনহ্যাম হটস্পারের পক্ষে এটি প্রথম বড় শিরোপি। ১৭ বছর ধরে তারা ট্রফির জন্য লড়াই করছিল, কিন্তু দীর্ঘ সময় কোন বড় প্রতিযোগিতায় জয়লাভ হয়নি। এই জয় তাদের দীর্ঘ প্রতীক্ষার ইতি টেনেছে। ইউরোপা লিগ শিরোপা টানা তৃতীয়বার স্পার্সের সংগ্রহে এসেছে।
এই জয়ের মাধ্যমে শুধু ট্রফি জেতাই নয়, আগামী মৌসুমে UEFA Champions League-এ খেলার সুযোগও নিশ্চিত হলো। যা ক্লাবের অর্থনৈতিক ও ক্রীড়াগত ভবিষ্যতের জন্য বড় লাভ।
ম্যানেজার ও খেলোয়াড়দের প্রতিক্রিয়া
ম্যাচ শেষে টটেনহ্যামের ম্যানেজার আঞ্জে পোস্টেকোগলু বলেন, “আমাদের এই জয় কঠোর পরিশ্রমের ফল। আমি আমার খেলোয়াড়দের এবং সমর্থকদের ধন্যবাদ জানাই যারা এই সাফল্যে বিশ্বাস রেখেছে। দীর্ঘ অপেক্ষার পর এই মুহূর্তটি বিশেষ।” তিনি আরও জানান, এই শিরোপা টিমের ভবিষ্যত গড়ার পথে বড় ধাপ।
ক্লাবের ক্যাপ্টেন সন হিউং-মিন তার অনুভূতি প্রকাশ করে বলেন, “এটি আমার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে গর্বের মুহূর্ত। আমরা একদলীয় পরিশ্রম করেছি এবং আজ সেই ফল পেয়েছি। আমাদের সমর্থকদের এই আনন্দে ভাগ নিতে চাই।”
ব্রেনান জনসন, যিনি ফাইনালের একমাত্র গোলটি করেছেন, বলেন, “আমি নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছি যে ফাইনালে গোল করার সুযোগ পেয়েছি। এটি আমার জীবনের স্মরণীয় দিন। দলের জন্য এটি একটি বিশাল অর্জন।”
ম্যাচে ঘটে যাওয়া ছোটখাটো ঘটনা
ট্রফি বিতরণ অনুষ্ঠানে একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে। কিছু খেলোয়াড় প্রথমে বিজয়ী মেডেল না পেয়ে হতাশ হন। পরে UEFA কর্তৃপক্ষ একটি দুঃখপ্রকাশ করে এবং সব খেলোয়াড়কে ড্রেসিংরুমে মেডেল সরবরাহ করে পরিস্থিতি সামাল দেয়।
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হতাশাজনক মৌসুম
অপরদিকে, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের জন্য এই মৌসুমটি মোটেই সুখকর ছিল না। দলের ব্যর্থতা পরিশেষে ইউরোপীয় কোন টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণের সুযোগ তাদের হাতছাড়া করল। এই ফাইনাল পরাজয়ের ফলে ইউনাইটেডকে মৌসুমের পর্যালোচনা করতে হবে এবং ভবিষ্যত পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করতে হবে।
সমর্থকদের প্রতিক্রিয়া এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
টটেনহ্যাম সমর্থকরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই জয়কে উদযাপন করেছেন এবং ক্লাবকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। এই ট্রফি স্পার্সের জন্য এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
ম্যাচের জয়ের ফলে ক্লাবের আত্মবিশ্বাস বেড়েছে এবং আগামী মৌসুমের জন্য উচ্চ প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে। ম্যানেজার পোস্টেকোগলু আশা প্রকাশ করেছেন যে এই সাফল্য দলকে আরও শক্তিশালী করবে এবং তারা ভবিষ্যতে আরো বড় ট্রফি জিততে সক্ষম হবে।
উপসংহার
টটেনহ্যাম হটস্পারের এই ইউরোপা লিগ বিজয় শুধু একটি ট্রফি জয়ের গল্প নয়, এটি কঠোর পরিশ্রম, দলগত একতা ও ধৈর্যের গল্প। দীর্ঘ ১৭ বছরের শূন্যতার অবসান ঘটিয়ে স্পার্স ফুটবল বিশ্বে আবার তাদের নাম আলোড়িত করেছে। আগামী দিনগুলোতে তারা চ্যাম্পিয়ন্স লিগে নতুন চ্যালেঞ্জ নেবে এবং ভক্তদের আরও আনন্দ দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে।
এটাই প্রমাণ করে, বড় ক্লাব হওয়া মানে শুধু ইতিহাস নয়, তা হলো নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করার অঙ্গীকারও।