
আহমেদাবাদের জমজমাট ফাইনালে শ্রেয়াস আইয়ারের পাঞ্জাব কিংসকে ৬ রানে হারিয়ে ইতিহাস গড়ল রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু। ভিরাট কোহলির নেতৃত্বে অবশেষে চ্যাম্পিয়নের মুকুট উঠল বেঙ্গালুরুর মাথায়।
২০২৫ সালের ৩ জুন, আইপিএল ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় দিন হয়ে থাকবে। ১৮ বছরের দীর্ঘ অপেক্ষা শেষে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু (RCB) অবশেষে তাদের প্রথম আইপিএল ট্রফি জিতে নেয়। আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত এই রোমাঞ্চকর ফাইনালে তারা ৬ রানে পরাজিত করে পাঞ্জাব কিংসকে (PBKS)। ম্যাচটি ছিল উত্তেজনায় ভরপুর, যেখানে একের পর এক নাটকীয় মুহূর্তে ভরেছিল পুরো স্টেডিয়াম এবং কোটি কোটি দর্শকের হৃদয়।
প্রথমে টস জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় বেঙ্গালুরু। শুরুটা ভালো না হলেও মাঝের ওভারে দলের অভিজ্ঞ ব্যাটাররা ইনিংস ধরে রাখেন। ভিরাট কোহলি তার চেনা স্টাইলে ৩৫ বলে ৪৩ রানের ইনিংস খেলেন, যা দলের ভিত গড়ে দেয়। তার সঙ্গে সমর্থন দেন রজত পাটিদার ও গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। তবে পাঞ্জাবের বোলাররা খুব একটা ছাড় দেননি। আর্শদীপ সিং ৪ ওভারে ৪০ রান দিয়ে তুলে নেন গুরুত্বপূর্ণ ৩টি উইকেট। কাইল জেমিসনও নেন ৩টি উইকেট, যদিও কিছুটা খরচ করে ফেলেন রান। শেষ পর্যন্ত ২০ ওভারে ৯ উইকেটে ১৯০ রান করে বেঙ্গালুরু।
১৯১ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নামে পাঞ্জাব কিংস। শুরুটা ধীর গতিতে হলেও মিডল অর্ডারে শশাঙ্ক সিং এবং জশ ইংলিস চেষ্টা করেন ম্যাচে গতি আনতে। শশাঙ্ক সিং ছিলেন একদম দুর্দান্ত – মাত্র ৩০ বলে অপরাজিত ৬১ রানের ইনিংস খেলেন, যেখানে ছিল ছয়টি দৃষ্টিনন্দন ছক্কা। শেষ ওভারে পাঞ্জাবের দরকার ছিল ১৩ রান। ব্যাটে ছিলেন শশাঙ্ক এবং রাবাদা। কিন্তু আরসিবির পেসার জশ হ্যাজলউডের চমৎকার বোলিংয়ে পাঞ্জাব মাত্র ৬ রান তুলতে সক্ষম হয়। ম্যাচ শেষ হয় ১৮৪/৭ স্কোরে।
আরসিবি’র বোলিং ইউনিটের মধ্যে হ্যাজলউড এবং কুনাল পান্ডিয়া বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। হ্যাজলউড শেষ ওভারের চাপে মাথা ঠান্ডা রেখে বল করে যান, যেখানে তার অভিজ্ঞতা বড় ভূমিকা রাখে। অন্যদিকে, কুনাল পান্ডিয়া ৪ ওভারে মাত্র ১৭ রান দিয়ে ২টি গুরুত্বপূর্ণ উইকেট তুলে নেন।
ম্যাচের সবচেয়ে আবেগঘন মুহূর্তটি আসে ম্যাচ শেষে। ভিরাট কোহলি জয়ের পর কান্নায় ভেঙে পড়েন এবং স্ত্রী অনুষ্কা শর্মা তাকে জড়িয়ে ধরেন। সেই দৃশ্য ভাইরাল হয়ে যায় সামাজিক মাধ্যমে। কোহলির ক্রিকেটজীবনের বহুবার চ্যাম্পিয়নশিপ হাতছাড়া হওয়ার বেদনা এই এক জয়ে যেন ধুয়ে-মুছে যায়। তিনি বলেন, “এই জয় শুধু আমাদের জন্য নয়, কোটি কোটি আরসিবি সমর্থকের জন্য। এত বছর ধরে তারা আমাদের পাশে থেকেছেন, আজ তাদের মুখে হাসি ফুটলো।”
আরসিবি ফ্র্যাঞ্চাইজির জন্য এই জয় শুধুই একটি ট্রফি জেতা নয়, এটি তাদের দীর্ঘদিনের ‘চোকার্স’ তকমা মুছে দেওয়ার এক বিশাল সুযোগ। ২০০৯, ২০১১ এবং ২০১৬ সালের ফাইনালে হেরে যাওয়া দলটি অবশেষে ২০২৫-এ এসে ভাগ্য ফেরালো। কোহলি, যিনি দলটির সঙ্গে শুরু থেকেই ছিলেন, এই শিরোপা জয়ে তার নেতৃত্ব ও নিষ্ঠার পুরস্কার পেলেন।
ম্যাচের পরে পাঞ্জাব কিংসের অধিনায়ক শ্রেয়াস আইয়ার বলেন, “আমরা লড়াই করেছি, কিন্তু শেষ পর্যন্ত কিছু ছোট ভুল আমাদের ম্যাচ থেকে দূরে সরিয়ে দেয়। তবুও দলের প্রতি আমি গর্বিত।” পাঞ্জাব কিংসের এটি ছিল আরও একটি হতাশাজনক শেষ, যেখানে তারা জয় ছুঁয়ে এসে ব্যর্থ হয়।
ম্যাচের পর অনুষ্ঠিত হয় আইপিএল ২০২৫-এর সমাপ্তি অনুষ্ঠান, যার থিম ছিল ‘অপারেশন সিঁদুর’ – ভারতীয় সেনাবাহিনীকে শ্রদ্ধা জানাতে উৎসর্গীকৃত। পুরো স্টেডিয়ামে আবেগ এবং গর্বের আবহ তৈরি হয়। ভারতের নানা রাজ্যের শিল্পীরা পরিবেশন করেন মনোমুগ্ধকর অনুষ্ঠান।
আরসিবির সমর্থকেরা এই দিনটি জীবনের অন্যতম স্মরণীয় দিন হিসেবে মনে রাখবেন। ব্যাঙ্গালোর শহরে হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে আসে উদযাপনের জন্য। সোশ্যাল মিডিয়ায় ছেয়ে যায় #RCBChampions2025 হ্যাশট্যাগ। কোহলির ট্রফি হাতে দাঁড়িয়ে থাকা ছবিটি রাতারাতি আইকনিক হয়ে যায়।
এই জয় কেবল একটি ট্রফির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এটি একটি দলের, একটি শহরের, কোটি কোটি সমর্থকের ১৮ বছরের ভালবাসা, ধৈর্য, ও আশার প্রতিফলন। বেঙ্গালুরুর এই ঐতিহাসিক জয় আইপিএল ইতিহাসের এক গৌরবময় অধ্যায় হয়ে থাকবে।